জাতীয়

মহান বিজয় দিবস আজ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের স্রোতধারা পেরিয়ে বাংলার মুক্ত আকাশে মুক্তির নিশান ওড়ার দিন ফিরে এল আবার।

দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল যে বাংলাদেশ, তার ৫৩তম মহান বিজয় দিবস আজ।

একাত্তরে শহীদদের স্মরণ আর বিজয়ের আনন্দ উদযাপনে লাল-সবুজে সেজেছে পুরো দেশ; উদযাপনে নেওয়া হয়েছে বিস্তৃত কর্মসূচি।

বাঙালির মুক্তি এসেছিল অনেক রক্ত ঝরিয়ে, শোষণ-বঞ্চনা আর যন্ত্রণার শেষে লাখো মানুষের আত্মাহুতি ও বাংলা মায়ের আত্মদানের বিনিময়ে।

তারই স্মরণে সোমবার সরকারি-বেসরকারি সব ভবনে উড়বে জাতীয় পতাকা, সাভার স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব শহীদ বেদীগুলো ভরে উঠবে শ্রদ্ধার ফুলে। বিজয়ের শোভাযাত্রায় মুখর হবে রাজপথ।

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও তা যে টিকবে না তা আঁচ করেছিলেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, তারপর নিপীড়ন-নির্যাতন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে প্রবল করে তোলে।

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকারের চাওয়াকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালে অস্ত্রের মুখে রুদ্ধ করার প্রয়াসে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল এই ভূখণ্ডের মানুষের উপর।

১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এই বাংলার মানুষ। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী; লাল সবুজ পতাকা ওড়ে স্বাধীন ভূমিতে, নতুন দেশে।

গত ৫৩ বছরে অনেক রাজনৈতিক আর আর্থসামাজিক উত্থান-পতন দেখেছে বাংলাদেশ; এ বছর জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান তাতে যুক্ত করেছে নতুন বাস্তবতা।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ নেই দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচিতে, রাষ্ট্রক্ষমতায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; এমন ভিন্নধর্মী এক প্রেক্ষাপটে একাত্তরে বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ উদযাপন করছে জাতি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে দেশত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই আন্দোলনে ‘নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীসহ দলটির বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার পতনের পর আসা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলা হবে কি-না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক; জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ অগাস্টসহ বিভিন্ন দিবস।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্তর্বর্তী সরকার একমাত্র ‘জাতির পিতা’ মনে করে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

তার ভাষায়, “আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫৩-তেই শুরু হয়নি, আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।”

এক্ষেত্রে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, যোগেন মণ্ডলসহ আরো কয়েকজনের নামও স্মরণ করেন এই তরুণ উপদেষ্টা, যিনি জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়নের ভূমিকায় ছিলেন।

একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে মুখে ফেরা ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে যে রায় হাই কোর্ট দিয়েছিল, তাও সম্প্রতি স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

এমন বাস্তবতায় আসা বিজয় দিবস পালনের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দেখছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, গবেষকসহ অনেকে।

তবে তারা বলছেন, বাংলাদেশে যত পরিবর্তনই আসুক না কেন, আর যে পথেই বাংলাদেশ ধাবিত হোক না কেন, মুক্তিযুদ্ধকে রাখতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সারওয়ার আলী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “একাত্তরের ধারাবাহিকতায় আমাদের আকাঙ্ক্ষার যে অপূর্ণতা রয়েছে, সেটিতে পূর্ণতার রূপ দিতে চব্বিশ (২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান) সহায়ক হোক- এই প্রত্যাশাটাই এ বছর আমার থাকবে।”

তিনি বলেছেন, সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ হলেও পরে নানা কারণে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। মানুষ নির্বাচনের ওপর আস্থা পায়নি।

“কাজেই, এ বছর এটি প্রত্যাশা করা যায় যে, যেহেতু মানুষ একটি জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও সরকার চায়, এই আকাঙ্ক্ষাটা পূরণ হোক, সেই প্রত্যাশাটা করি।”

সারওয়ার আলী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বয়ানগুলো আমরা তুলে ধরব, সেটাকে কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে, সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বা মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তীকালের যে বয়ান, এটির কোনো পরিবর্তন হয় নাই।

“যদি কোনো নতুন উপাদান আবিষ্কৃত হয়, তবে সেটি যুক্ত হবে। কিন্তু বয়ানতো পরিবর্তন হয় না। কোনো দেশের জন্যই, বাংলাদেশের জন্যতো আলাদা কিছু হবে না।”

সংবাদমাধ্যমগুলো যে এবার বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিশেষভাবে খবর প্রকাশ করেনি, তা চোখে পড়ার কথা তুলে ধরেন ডা. সারওয়ার আলী।

যেকোনো দেশে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ‘নিছক ছুটির দিবস নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই বছর ব্যতিক্রম হল, সেজন্য বলছি, ডিসেম্বর মাস আসলে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কলাম থাকত, প্রাইম নিউজে প্রত্যেকটি টেলিভিশনে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা এপিসোড হত, এ বছর কোনো অজ্ঞাত কারণে বা সঙ্গত কারণে আমি জানি না, এটি অনুপস্থিত দেখছি। আপনারা সারা মাসে করেননি, টেলিভিশনও করেনি; হয়ত ১৪ আর ১৬ ডিসেম্বর করবে।

“এর কারণ হতে পারে, তথ্যমাধ্যম হয়ত মনে করছে, যারা ক্ষমতাসীন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের বিরূপ ধারণা রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় না যে, এই ধরনের প্রকাশ আমি দেখি। আমি যেটা ধারণা করি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে আবেগ এবং অনুভূতি, সেটা সমাজে যেমন করে রয়েছে, রাষ্ট্র যারা পরিচালনা রয়েছেন, তাদের মাঝেও রয়েছে।”

লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক হারুন হাবীব সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ২৬ মার্চ, ১৪ ডিসেম্বর এবং ১৬ ডিসেম্বরকে জাতীয় স্মারক হিসাবে ‘নিঃশর্তভাবে’ মেনে নিয়ে, পরিপূর্ণ মর্যাদা দিয়েই ইতিহাসের সত্যটাকে সম্মান জানানো উচিত।

“আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন নাগরিক হিসেবে মনে করি, স্বাধীনতার ইতিহাসটাকে কখনও বিতর্কের মধ্যে আনা উচিত নয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এ দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত, লাখ লাখ নারীর সভ্রম যে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত, লাখ লাখ মানুষের ধ্বংসযজ্ঞ যে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত- সেই ইতিহাসকে কারো পক্ষেই, কারোর জন্যই, কোনো দলমতেরই বিতর্কের মধ্যে আনা উচিত হবে না।”

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, দলমত নির্বিশেষে যে কোনো গণতন্ত্র-সঙ্গত মানুষেরই তার নিজস্ব ধ্যানধারণার মত সরকার চালানোর অধিকার থাকবে, কাউকে তার পক্ষে বা বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়ার মত অধিকার থাকবে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে যদি শাশ্বতভাবে, তার স্বারক অস্তিত্বকে স্বীকার করতে ভুলে যান, তাহলে সেটা জাতির জন্য সঙ্কটের কারণ হবে।”

বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে শোষণমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

তিনি বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম ও কৃষি বিপ্লবের শুরু হয়। কিন্তু বিজয়ের পাঁচ দশক পার হলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। বার-বার আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথচলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

“তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই থেমে যায়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে-ইনশাআল্লাহ।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী, তাই ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানায়।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

“তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।”

বিজয় দিবস উপলক্ষ দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।”

তিনি বলেন, “আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।

“আমাদের দেশকে আরো উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমি ‘বিজয় দিবস ২০২৪’ এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আজ ১৬ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় এবং স্মরণীয় দিন । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। লাখ লাখ শহিদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।”

স্মরণে-উদযাপনে

সোমবার প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

বিজয় দিবসে সরকারি ছুটির দিনে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো ইতোমধ্যে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

এছাড়া দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী বিজয়মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

সরকার এক তথ্য বিবরণীতে জানিয়েছে, বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করেছে।

চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে এবং চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

 

সূত্র : বিডিনিউজ

এরকম আরও খবর

Back to top button