আলোচিতরাজনীতি

দিল্লি ও ঢাকার আপত্তির পর ‘সুর পাল্টালেন’ হাসিনা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ভারতে বসে শেখ হাসিনা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনায় যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন তা ভারত সমর্থন করে না- দেশটির পক্ষ থেকে এমন অবস্থান স্পষ্ট করার পর অনেকটা সুর পাল্টিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। জনরোষে পালিয়ে যাওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এবার বিবৃতি দিলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাম উল্লেখ করেননি। ভারত এটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেই দেশটিতে আশ্রিত শেখ হাসিনা সুর পাল্টিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের অনলাইনে ‘দিল্লি-ঢাকার আপত্তি! এবার নাম না নিয়ে ইউনূস প্রশাসনকে নিশানা করে লিখিত বিবৃতি হাসিনার’ শিরোনামের সংবাদে সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ভারতে বসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের বিরোধিতা করাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না ঢাকা! ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রিকে সে কথাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিদেশসচিব মো. জসীম উদ্দিন। এ বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন বিক্রম। বিদেশসংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং (স্থায়ী) কমিটির বৈঠকে তিনি জানান, ভারতে থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রীর বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতি সমর্থন করে না নয়া দিল্লি! দিল্লি-ঢাকার আপত্তির পর এবার নাম না করে ইউনূস প্রশাসনকে নিশানা করলেন হাসিনা!

শনিবার বাংলাদেশের ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে হাসিনার একটি লিখিত বিবৃতি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সেই বিবৃতিতে সরাসরি ইউনূস প্রশাসনের নাম করেননি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি লেখেন, ‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সাধারণ মানুষের ওপর অমানবিক নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তিকে পুনর্বাসন করছে।’মুক্তিযুদ্ধের স্মারকচিহ্ন ‘পরিকল্পিতভাবে’ ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হাসিনা।

হাসিনার উদ্বেগ, বাংলাদেশে ‘গভীর সংকটময়’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশকে ‘জঙ্গিদের ঊর্বর লীলাভূমিতে পরিণত’ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার। এই সব ‘অপশক্তি’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান হাসিনা। তার কথায়, ‘দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে ভারত যেন হস্তক্ষেপ না করে। এছাড়া শেখ হাসিনা সেখানে বসে যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার ভালোভাবে নিচ্ছে না জানিয়ে সেই বার্তা শেখ হাসিনাকে পৌঁছানোর আহ্বানও জানানো হয়। দিল্লি ফিরে গিয়ে বিক্রম মিশ্রি শেখ হাসিনা ইস্যুতে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। এতেই মূলত শেখ হাসিনার সুর পাল্টে যায়।

এরকম আরও খবর

Back to top button