গাজীপুরস্বাস্থ্য

কালীগঞ্জে ৩০০ শয্যার ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিনিধি : কালীগঞ্জের মঠবাড়ীতে দ্য খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের ৪৭ হাজার সদস্যের অর্থে প্রতিষ্ঠিত ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের উদ্বোধন হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) এ হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও। সম্মানিত অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া।

কালীগঞ্জের মঠবাড়ীতে ৩৩ বিঘা জমির ওপর মোট আড়াই লাখ বর্গফুট জুড়ে নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। বেইসমেন্ট বাদে সাতটি তলা। কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে এই হাসপাতালে। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৮ কোটি টাকা, এরই মধ্যে ৩৩০ কোটি খরচ হয়েছে। যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি থেকে। গত ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে এর কার্যক্রম।

প্রধান অতিথি কার্ডিনাল প্যাট্রিক বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট শতভাগ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে হাসপাতাল করেছে। আমি প্রার্থনা করি, সেবার মনোভাব নিয়ে ডিভাইন মার্সি এগিয়ে যাক।’

মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের মান নিয়ে আমাদের অনেক পর্যবেক্ষণ আছে। ঢাকা ক্রেডিটের নির্মিত ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল নতুন আশা নিয়ে উদ্বোধন হলো। আশা করি, এই হাসপাতাল একটি ভালো সেবার প্রতিষ্ঠান হবে।’

এদিন ঢাকা সভাপতি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া ঢাকা ক্রেডিটের চলমান উন্নয়ন, কার্যক্রম এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

নামফলক উন্মোচন, বেলুন ওড়ানো, কবুতর ছেড়ে দেওয়া, বৃক্ষরোপণ এবং আশীর্বাদের মাধ্যমে অতিথিরা হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। এ সময় সবাই ফিতা কেটে হাসপাতালে প্রবেশ করেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গোমেজ।

হাসপাতাল উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ক্রেডিটের ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা।

১৯৫৫ সালে ২৫ জন সদস্যের ৫০ টাকা মূলধন নিয়ে ক্যাথলিক পাদ্রি ফাদার চার্লস জোসেফ ইয়াং ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ঢাকা ক্রেডিটের প্রায় ৪৭ হাজার সদস্য এবং সম্পদ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ঢাকা ক্রেডিট বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ‘ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল লি.’ ঢাকা ক্রেডিটের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে রয়েছে সকল সর্বাধুনিক প্যাথোলজিসহ নানা সুবিধা।

ঢাকা ক্রেডিটের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

দেশে এই প্রথম

৩০০ শয্যার এই হাসপাতালের উদ্যোক্তা দ্য খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ঢাকা ক্রেডিট নামেই এটি বেশি পরিচিত। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এই সমবায় আন্দোলনের সূত্রপাত করেন ক্যাথলিক পাদ্রি ফাদার চার্লস জোসেফ ইয়াং। ৫০ জন সদস্য আর ২৫ টাকা মূলধন নিয়ে ফাদার ইয়াং যার সূচনা করেছিলেন, বর্তমানে সেই ঢাকা ক্রেডিটের সম্পদের পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সদস্য ৪৭ হাজারের বেশি।

ঢাকা ক্রেডিটের এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রকল্প ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল। উদ্যোক্তাদের দাবি, সমবায়ের মাধ্যমে এমন হাসপাতাল নির্মাণ বাংলাদেশে এই প্রথম। ঢাকা ক্রেডিটের তৎপলীন সভাপতি মার্কুজ গমেজ এর উদ্যোগ নেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন মেজর জেনারেল (অব.) জন গমেজ, পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়াসহ আরো অনেকে। ভারতের ফাদার মুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের নানা কাজে সহায়তা করেছে।

হাসপাতালটির ভৌত স্থাপনার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তারও বছর পাঁচেক আগে।

৫০ হাজার মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ

ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক মার্কুজ গমেজ। ঢাকা ক্রেডিটের সভাপতি থাকার সময় তাঁর নজরে আসে, সমিতির সদস্যদের একটা বড় অংশ চিকিৎসার জন্য ঋণ নিচ্ছে। অনেকেই ডাক্তার দেখাতে ভারত কিংবা সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে নিঃস্বও হয়ে যাচ্ছেন। মার্কুজ তখন ভাবেন, কিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত করা যায়। এ জন্য তিনি ‘হেলথ প্রটেকশন স্কিম’ চালু করেন। এর আওতায় সদস্যরা মাসে ৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা করে জমা দিতেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে সেই সদস্য সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পেতেন। স্কিম চালুর বছরখানেকের মাথায় দেখা গেল, সদস্যদের বড় অংশকে হাসপাতালে সহায়তা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশে, বিশেষ করে নার্সিং পেশায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কর্মীদের সুনাম আছে। মার্কুজ গমেজের মনে হলো, একটি হাসপাতাল করা গেলে সেখানে তাঁদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে। সেই ভাবনা থেকেই তিনি সমিতির বার্ষিক সভায় হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দেন। সদস্যরা সবাই সানন্দে সায় দিলেন। সেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাস্তবায়িত হয়েছে সাততলার আধুনিক হাসপাতাল।

সাধারণ রোগীদের প্রথমে রিসেপশনে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর তাদের পাঠানো হয় দোতলায় চিকিৎসকের কক্ষে। গত ১ জানুয়ারি থেকে বহির্বিভাগে সেবা পাচ্ছে রোগীরা। এখন দৈনিক গড়ে ১৫০ জনের মতো রোগী আসছে।

হাসপাতালটি মোট ১৫টি বিভাগ ও আটটি অপারেশন সেন্টার চালু আছে। ডাক্তার, নার্সসহ জনবল আছে আড়াই শ জনের বেশি।

মেডিকেল কলেজও হবে

সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিষয়ক শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যেও কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হাসপাতালের পাশেই একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে চান তাঁরা। এরই মধ্যে নার্সিং ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী তিন বছরের মধ্যেই মেডিক্যাল কলেজ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এরকম আরও খবর

Back to top button