আলোচিতজাতীয়সারাদেশ

দেশে শীর্ষ মাদক কারবারি ৭৯ জন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মাদকের মরণ নেশার ছোবলে দিশেহারা যুবসমাজ। শহর থেকে গ্রাম, সবখানেই ছড়িয়ে গেছে ইয়াবা, আইস, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। মাদক চক্রগুলো যেন অপ্রতিরোধ্য। এমন অবস্থায় এবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) শীর্ষ মাদক কারবারিদের একটি ‘গোপনীয়’ তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেই তালিকায় এবার নাম এসেছে ৭৯ জনের; যার মধ্যে এবারও চট্টগ্রাম বিভাগে এক নম্বরে রয়েছেন কক্সবাজার-৪ আসনের বিতর্কিত সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। ঢাকা বিভাগে এক নম্বরে রয়েছে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের আলোচিত মাদকসম্রাট মো. সোহেল ওরফে ভূঁইয়া সোহেলের নাম।

তালিকায় শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে মোট ৮৩ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও এর মধ্যে চারজনের নাম দুবার করে এসেছে। সে হিসাবে শীর্ষ মাদক কারবারি ৭৯ জন। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের ২৭ জন, কক্সবাজার-চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ১৯ জনসহ সব বিভাগেরই মাদক কারবারির নাম উঠে এসেছে তালিকাটিতে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শীর্ষ মাদক কারবারির তালিকা ধরে ডিএনসির প্রত্যেক জেলা কর্মকর্তাদের মাদকবিরোধী অভিযানের টার্গেট দেওয়া হয়েছে। সেই টার্গেট কতটা বাস্তবায়ন হলো, সেটা নিয়েও প্রতি মাসে ডিএনসির মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। মূলত মাদকবিরোধী অভিযানসহ সার্বিক দায়দায়িত্বের বিষয়ে আমরা জবাবদিহি বাড়িয়েছি।’

তাতে মাদক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ বলেন, ‘আগের থেকে ভালো মনে হচ্ছে। কিন্তু মাদক কারবারে যেহেতু প্রচুর টাকা কামানোর সুযোগ থাকে, তাই এটা পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। কোনো না কোনো উপায়ে চক্রগুলো মাদক কারবার চালিয়ে যায়। ফলে সব চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই কাজ করছি।’

এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সারা দেশের মোট ১ হাজার ২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই তালিকারও প্রথম দিকেই ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচরদের নাম। সাবেক এমপি বদি ‘ইয়াবা বদি’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি বা দলীয় নেতা হওয়ার কারণে বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার হন ইয়াবা ডন আবদুর রহমান বদি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের সেই তালিকার সবাই অবশ্য গ্রেপ্তার হননি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদেরও অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের নানা কৌশলে মাদক কারবারে সক্রিয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিত্যনতুন কৌশলে মাদক চক্রগুলো তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। মাদকের সরবরাহ ও চাহিদা দুটোই বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিরো টলারেন্স ঘোষণা, কঠোর অভিযান, এমনকি কথিত ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনার পরও কমছে না মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য। তার পরও সীমান্ত এলাকাসহ মাদকপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি ও অভিযানের কথা বলছেন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘র‌্যাব যে কয়েকটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে থাকে তার অন্যতম প্রধান একটি হচ্ছে- সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাব জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানেও র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন নিজ নিজ এলাকায় নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে।’

ডিএনসির তালিকায় শীর্ষ ৭৯ মাদক কারবারি যারা
এ তালিকায় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. সোহেল ওরফে ভূঁইয়া সোহেল, একই ক্যাম্পের মো. সেলিম, পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ লালমাটিয়ার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম ওরফে ফতু, শাহআলী এলাকার (গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও) ফতেহ, কলাবাগান এলাকার (গ্রামের বাড়ি নড়াইল) কাহরিয়ার ইসলাম শান্ত, জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বকশীগঞ্জের মন্টু শেখ, বনানীর কড়াইল বস্তির মো. হিরণ, মো. কামাল হোসেন ও মো. সবুজ আহম্মেদ, গুলশানের মো. লতিফ, তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া বটতলার মো. জয়নাল, শাহবাগ আনন্দবাজারের সৈয়দ আশিকুর রহমান সজল, জেনেভা ক্যাম্পের মো. হিরা, মোহাম্মদপুরের শেরশাহশুরি রোডের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ হাউজিং রোডের মো. কালু ওরফে দাঁত ভাঙা কালু, হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা আবুল কালাম ফরাজী, তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর আব্দুল আমিন, গুলশান কালাচাঁদপুরের মাহবুবুর রহমান ও মো. আলতাফ, কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের এ কে এম মোকারিম, মুগদা-বাসাবো এলাকার এহসানুল হক ওরফে বাপ্পা, সবুজবাগের ওহাব কলোনির মোসা. তানিয়া খাতুন, কামরাঙ্গীরচরের মো. রাশেদ, মুগদার মানিকনগরের মো. রনি ওরফে খাজা রনি, ভাটারা এলাকার মো. নবী হোসেন, চকবাজারের মো. আমান উল্লাহ রতন ওরফে চামারু রতন, কোতোয়ালির সম্ভুনাথ সুর এবং কামরাঙ্গীরচরের খুরশিদা বেগম ওরফে খুশি।

কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের শীর্ষ মাদক কারবারির তালিকায় যারা আছেন তারা হলেন কক্সবাজার-৪ আসনের টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। যিনি গত আগস্টে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর রয়েছেন চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের (ফটিকছড়িতে গ্রামের বাড়ি) মো. সোলেমান, দক্ষিণ পতেঙ্গার মো. ইসমাইল, একই এলাকার মো. জসিম উদ্দিন, কর্ণফুলীর ইছানগরের মো. তাহের, কোতোয়ালির গোয়ালপাড়া তুলাতুলীর আকলিমা, একই মহল্লার মো. খোকন, কক্সবাজারের টেকনাফের লেঙ্গুরিবিলের জাফর আলম চেয়ারম্যান (সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন বদির এই অন্যতম সহযোগী), টেকনাফের চৌধুরীপাড়ার মৌলভি মুজিবুর রহমান, আলিয়াবাদের আব্দুল আমিন, আরিয়াবাদের আব্দুস শুকুর, হ্নীলা ইউনিয়নের উত্তর আলীখালীর জামাল হোছন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পূর্ব সাতঘরিয়ার রাকিব আহমদ, হ্নীলার পশ্চিম লেদা গ্রামের নুরুল হুদা এবং টেকনাফ পৌর এলাকার দক্ষিণ লেঙ্গুরবিলের সাইফুল ইসলাম।

তালিকায় রাজশাহী বিভাগের শীর্ষ মাদক কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গড়ের মাঠ এলাকার শীষ মোহাম্মদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের বালিয়াদীঘি ধরীপাড়ার মো. তারেক, নওগাঁ সদরের চকপ্রাণ এলাকার মো. স্বপন আহম্মেদ, জয়পুরহাট সদর থানাধীন ফুলতলীর মো. আতিক এবং পাবনা সদর থানাধীন দক্ষিণ রামচন্দ্রপুরের শ্রী কমল দাস।

তালিকায় রংপুর বিভাগের মাদক কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন রংপুর শহরের আশরপুরের মো. গোলজার আলী, একই এলাকার রোকসানা বেগম, দিনাজপুরের কোতোয়ালির রানীগঞ্জ মোড়ের সেলিনা খাতুন, দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গার মফিজুর রহমান (রতন), লালমনিরহাট সদরের সাকোয়ার মো. লাল সরকার ওরফে পিচ্চি লাল, লালমনিরহাট পৌর এলাকার তালুক খুটামারার মো. মজিবুল ইসলাম ওরফে মজিদুল মুহরি, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুড়া সবুজপাড়ার মো. আনিছুর রহমান (অনিক), একই উপজেলার উত্তর ভেরিভেরি গ্রামের মো. মবু মিয়া (মবু ডাকাত), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর বদিজামালপুর কানিপাড়ার মো. রেজাউল করিম রাজু ও কুড়িগ্রাম সদরের ভেলাকোপার মো. এমদাদুল হক বাহার।

এ তালিকায় ময়মনসিংহ বিভাগের শীর্ষ মাদক কারবারির মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহের কোতোয়ালির কেউটাখালীর মোসা. রেহেনা, একই থানার আকুয়ার মির্জা মাহমুদ ওরফে মাকমুদ, পাটগুদাম গ্রামের সুরমা বেগম, নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কাঁকড়াকান্দার শামীম মিয়া ওরফে শুটার শামীম ও জামালপুরের ইসলামপুরের বেনুয়ারচরের মো. মোশো। বরিশাল বিভাগের মধ্যে রয়েছেন পটুয়াখালী সদর থানাধীন চরপাড়ার মো. সোহেল, বরিশালের কাউনিয়ার মোহাম্মদপুরের শিল্পী বেগম, বরিশাল সদরের খানবাড়ির মো. সজল খাঁ, বরিশাল কোতোয়ালির রসুলপুরের পলাশ হাওলাদার এবং গৌরনদীর কাঠকস্থলের হিরা মাঝি।

খুলনা বিভাগের শীর্ষ মাদক কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা শহরের শামসুর রহমান রোডের সৌরভ সাহা, একই মহল্লার মো. মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা সদর থানাধীন মধুমোল্যাডাঙ্গীর মনজু বেগম, যশোর কোতোয়ালির ষষ্ঠিতলার রেখা বেগম এবং একই এলাকার মো. আশাদুল হক। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের শীর্ষ মাদক কারবারিদের মধ্যে এ তালিকায় রয়েছেন সিলেটের দক্ষিণ কোম্পানীগঞ্জের খাগাইলের মো. জিয়া উদ্দিন, গোলাপগঞ্জের রণকেলীর মো. আয়লাফ আহমদ, হবিগঞ্জের মাধবপুরের শ্রীধরপুরের মো. মামুন, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আরামবাগের সাগর রবিদাস, একই উপজেলার মাধবপুর পশ্চিমের মো. আলী আকবর, হবিগঞ্জ সদরের উত্তর বড় বহুলার মো. সৈয়দ আলী এবং সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চালতপাড়ার মো. হেলাল খাঁ।

 

সূত্র : খবরের কাগজ

এরকম আরও খবর

Back to top button
En okänd etikettsregel: Vem ska gå till vänster på gatan, Эксперт назвал 2-центовое средство от крыс и мышей, которые никогда Utför detta innan du laddar din smartphone: batteriet Böter på 1 000 euro: varför du inte Inte en gram till: förvånande mängd tvättmedel som behövs Hur länge ska man koka mjukkokta ägg: den exakta tiden En pussel för dem med utmärkt syn: