যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বাড়াচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ পরিসীমার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে আঘাত হানতে পারবে ইউক্রেন। দেশটির ওপর থেকে এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। রুশ আইনপ্রণেতারা বলছেন, এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করলেন বাইডেন। গোটা বিষয়টি রাশিয়ার যুদ্ধের ব্যয়ও বাড়িয়ে দেবে- এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বাইডেনের এ সিদ্ধান্তটিকে ‘আগুনে তেল ঢালার’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন বলছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়ার ভেতরে প্রথম দীর্ঘ পরিসীমার আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে ইউক্রেন। তবে ওই সূত্র অভিযানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে- এমন উদ্বেগে বিস্তারিত আর কিছু জানাননি।
এমন একটি সময়ে এ পদক্ষেপের খবর সামনে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার খুব কাছে রয়েছেন বাইডেন। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বরাবরই ইউক্রেন যুদ্ধের বিপক্ষে। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি বন্ধ করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একাধিকবার। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় এমনিতে যুদ্ধ যে সময়ে শেষ হতো, তার বহু আগেই এটি শেষ হয়ে যাবে।
জেলেনস্কি বহু আগে থেকেই রাশিয়ায় হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দীর্ঘ পরিসীমার অস্ত্র চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই তার সে আবেদন নাকচ করে দেওয়া হতো। এর আগে একবার খবর রটেছিল যে, বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে। তখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ইউক্রেনকে দীর্ঘ পরিসীমার অস্ত্র দিলে ন্যাটো ও পশ্চিমের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে রাশিয়া।
গত আগস্টে রাশিয়ার কারস্ক অঞ্চলটির বেশ কিছু গ্রাম নিজেদের দখলে নেয় ইউক্রেন। পরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন, কিয়েভ ও অন্যরা। তবে রাশিয়া সেসব আপত্তি আমলে নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করেননি জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, এ রকমটি হলে ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোই ‘জবাব দেবে’। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজকে গণমাধ্যম বলছে যে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু হামলা শব্দ দিয়ে হয় না। এ ধরনের কিছুর ঘোষণা দেওয়া হয়নি।’ গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে হোয়াইট হাউস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই নিশ্চিত করেনি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি
রাশিয়ার আইনপ্রণেতা মারিয়া বুটিনা গতকাল সোমবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে দীর্ঘ পরিসীমার অস্ত্র ব্যবহার করতে দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছে। রয়টার্সকে বুটিনা বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের এই ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকাকালে পরিস্থিতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উসকে দিতে চাইছে।’
বুটিনা আরও বলেন, আমার আশা রয়েছে যে ট্রাম্প সিদ্ধান্তকে উল্টে দেবেন। কারণ এটি গুরুতরভাবেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে, যা কারও স্বার্থই রক্ষা করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র কী যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবে
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ পরিসীমার ক্ষেপণাস্ত্র পেলে তা দিয়ে নিঃসন্দেহে রাশিয়ার ভেতরে আঘাত হানতে পারবে ইউক্রেন। কিন্তু তাতে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে কি না, সে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দীর্ঘ পরিসীমার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পারে। সেটি দিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও অবকাঠামোতে আঘাত হানতে পারবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে দিতে পারবে না। আর সে কারণেই তা যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে যথেষ্ট হবে না।
তবে কিয়েভে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, এর প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে। এটি ইউক্রেনের মনোবল চাঙ্গা করবে এবং দেশটির প্রতি যে সামরিক সমর্থন রয়েছে, তা আরও স্পষ্ট করে তুলবে। অন্যদিকে ওবামা প্রশাসনে উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিবের দায়িত্ব পালনকারী এভিলিন ফারকাস প্রশ্ন রেখেছেন, ঠিক কী পরিমাণ অস্ত্র দেওয়া হবে তা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রশ্নটি হলো, তাদের কাছে কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে? আমরা শুনেছি যে ইউক্রেনকে এ ক্ষেপণাস্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া সম্ভব না বলে সতর্ক করেছে পেন্টাগন।’
ফারকাস অবশ্য মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনকে দীর্ঘ পরিসীমার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রাখবে। এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও নিজেদের দীর্ঘ পরিসীমার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দিতে পারে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত রবিবার দেশটির উত্তর-পূর্বের সুমি শহরের এক আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশুসহ ১১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৮৯ জন, তাদের মধ্যে ১১টি শিশু। এ ছাড়া আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র বিদ্যুদ্বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সুমি শহরে হামলার আগে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডে হামলা চালায় রাশিয়া। কিয়েভ ওই হামলাকে এরই মধ্যে ‘ব্যাপক আক্রমণের’ তকমা দিয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় মারা গেছেন সাতজন। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স