গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আলোচনায় থাকা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান ও তার চার ছেলেসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের সবার ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করতে রোববার সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে।
চিঠিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান, তার ছেলে কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহানের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান, সাবরিনা সোবহান ও ইয়াশা সোবহানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করতে বলেছে বিএফআইইউ।
চিঠিতে তাদের ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সেগুলোর হালনাগাদ লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া চিঠিতে তাদের ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত সব ধরনের সচল হিসাবের তথ্য, চলমান ঋণের তথ্য, আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং লকার সংক্রান্ত তথ্য দুই কর্মদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউ এর এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, রোববার বিকালে এ চিঠি ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠি পাওয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, নির্দেশনা মত তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকবে। অর্থ জমা করার সুযোগ থাকবে। তবে উত্তোলন বা স্থানান্তর করার সুবিধা বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত।
ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকা সংক্রান্ত বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, “আলোচিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে আপনাদের ব্যাংকে পরিচালিত সকল ধরনের সচল ব্যক্তিক হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের স্থগিত করতে আপনাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হল।”
বসুন্ধরা গ্রুপের বিপুল বিপুল জমি দখল, অর্থপাচার ও কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধান শুরুর মধ্যে এবার বিএফআইইউ আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিল।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি আর্থিক খাত এবং বড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তৎপর হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সবচেয়ে বড় আবাসন কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়ার কথা তুলে ধরে গত ৫ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানে নামার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সিআইডি।
এর আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধাভোগী কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ’কর ফাঁকিসহ আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ’ থাকার কথা তুলে ধরে অনুসন্ধান শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
এ সংস্থার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ২২ অগাস্ট আরও কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপের সঙ্গে বসুন্ধরার বিষয়েও “বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকির’ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
আর বসুন্ধরার মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেওয়ার কথা ২ অক্টোবর জানায় এনবিআর।