মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা, তথ্য সংগ্রহে বুথ চালু
নিজস্ব প্রতিনিধি : শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মসলিন কটন মিলের প্রায় ২৮’শ শ্রমিকের বকেয়া পাওনা রয়েছে এখনো প্রায় ২’শ কোটি টাকারও বেশি। এ অর্থ পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে চলছে প্রাক্তন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এবার শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায়ে নতুন করে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক মসলিন কটন মিল লগোয়া ভাদার্ত্তী এলাকার কৃতি সন্তান নাইম আহমেদ।
এর অংশ হিসেবে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক আলোচনায় শ্রমিকদের বকেয়া আদায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের দৃষ্টি আকর্ষন করেন নাইম আহমেদ। সে সময় এবিষয়ে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমে। সে সময় উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি গাওহার সিরাজ জামিলও।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন যোগ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বিকেএমইএ’র এই দুই নেতা।
সার্বিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নাইম আহমেদ জানান, মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায়ে বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শ্রমিকদের পাওনা সংক্রান্ত সকল নথিপত্র পর্যালোচনা করে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাওনা আদায়ে শ্রমিকদের পাশে থাকবেন তিনি।
নাইম আহমেদ আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য কালীগঞ্জে একটি বুথ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে প্রথমে আমার নির্ধারিত প্রতিনিধি হিসেবে প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে মো: আশরাফুল হক সোহেল। এতে চাইলে যে কেউ অংশ নিতে পারবে। শ্রমিকদের পাওনা সংক্রান্ত তথ্য এবং নথিপত্র সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ বিনা খরচে তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে। শ্রমিকদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শ্রমিকদের তথ্য দিতে যোগাযোগ করুন : মো: আশরাফুল হক সোহেল, প্রোপাইটর : বধুয়া রোজ গার্ডেন, মোবাইল ০১৭১৫-২৮৫ ০২৪, হক মার্কেট, নতুন সোনালী ব্যাংকের মোড়, কালীগঞ্জ, গাজীপুর।
উল্লেখ্য: বাংলাদেশের শিল্প অগ্রসরতা তথা বস্ত্র শিল্পের এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মসলিন কটন মিল’। ১৯৫২ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার ভাদার্ত্তী গ্রামে স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নয়নাভিরাম স্থানে ১০০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপড় কল ‘মসলিন কটন মিল’ পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (পিআইডিসি)।
১৯৫৪ সালে উৎপাদন শুরু হলে স্পিনিং বা সুতা বিভাগে টাকুর সংখ্যা ৪৮ হাজার, বয়ন বিভাগে লুম সংখ্যা ৪৯৬ এবং ডাইং ও ফিনিশিং বিভাগ ছিল। সে সময় ২ হাজার ৮ শ’জন শ্রমিক, ২৭০ জন কর্মচারী এবং ৩৫ জন কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টন পর্যমত্ম সুতা এবং সোয়ালক্ষ মিটার কাপড় উৎপাদিত হত ‘মসলিন কটন মিলে’।
এরপর কয়েক দফা মালিকানা পরিবর্তন হতে হতে সর্বশেষ ২০০১ সালে বন্ধ হয়ে যায় মসলিন কটন মিল। বন্ধের সময় প্রায় ২৮০০ (দুই হাজার আটশত) শ্রমিকদের পাওনা ইন্স্যুরেন্স, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, বাৎসরিক উৎসব বোনাস অদ্যবধি বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণসহ বকেয়া পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
বকেয়া পাওনা আদায়ে আন্দোলনে অংশ নেয়া শ্রমিকদের দাবি, নিয়োগসূত্রে আমরা রাষ্ট্রের শ্রমিক-কর্মচারী। আমাদের জানা মতে মসলিন কটন মিলের জমির পরিমান প্রায় ১০০ একর। এর মধ্যে থাকা স্থাপনা ও ১২০টি মেশিনসহ অন্যান্য মালামল মিলে বর্তমান বাজার মূল্য হবে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা টাকা আছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি। এ ন্যায্য পাওনা পরিশোধে কতিপয় ব্যক্তি লুকোচুরি করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
তারা আরো বলেন, বারবার তাগাদা দিলেও ন্যায্য পাওনা না পেয়ে অবশেষে আমাদেরকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা চাই অনতিবিলম্বে আমাদের পাওনা মিটিয়ে দেয়া হোক। অন্যথায় আরও বড় ধরনের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
প্রসঙ্গত: ২০১৩ সালের ০৩ আগস্ট তৎকালীন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি’র চেষ্টায় ঐতিহ্যবাহী ‘মসলিন কটন মিল’ ভিন্ন নামে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন মসলিন কটন মিলস উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানাটি ফের চালু করার ঘোষণা দেন তৎকালীন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
হা-মীম গ্রুপের পক্ষে রিফাত গার্মেন্টস ১৩৫ কোটি টাকায় মিলটি তখন কিনে নিয়েছে। বর্তমানে হা-মীম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে রূপান্তরিত হয়ে রিফাত গার্মেন্টস পোশাক উৎপাদন করছে ঐতিহ্যবাহী ‘মসলিন কটন মিলে’।
আরো জানতে…….
মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের দাবী আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে মানববন্ধন
মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের দাবী আদায়ে সহায়তার আশ্বাস দিলেন এমপি চুমকি
মসলিন কটন মিলের শ্রমিকদের পাওনা ২০০ কোটি টাকা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন
বস্ত্র শিল্পের এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মসলিন কটন মিল’