আন্তর্জাতিকআলোচিত

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বন্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে তা আগামী এক বছরের মধ্যে বন্ধের দাবিতে জাতিসংঘে একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সাধারণ পরিষদের চলমান দশম বিশেষ জরুরি অধিবেশনে এটি পাশ হয়।

ফিলিস্তিন কর্তৃক উপস্থাপিত রেজ্যুলেশনটি বাংলাদেশসহ ৫৩টি দেশ কো-স্পন্সর করে। রেজ্যুলেশনটি ভোটের জন্য উপস্থাপিত হলে ১২৪টি দেশ এটির পক্ষে ও ১৪টি দেশ বিপক্ষে ভোট প্রদান করে। আর ৪৩টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। কো-স্পন্সর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রেজ্যুলেশনটির পক্ষে ভোট দিয়েছে।

জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে ইসরায়েলের জন্য রেজুলেশনটি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। একইদিনে ভাষণ দেবেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

রেজুলেশনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত কর্তৃক গত ১৯ জুলাইয়ের প্রদত্ত পরামর্শমূলক মতামতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। যাতে কি-না ইসরায়েলের দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে অতি দ্রুত তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সাধারণ পরিষদের রেজুলেশনে দেশগুলিকে ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল থেকে উৎপাদিত যেকোনো পণ্যের আমদানি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি দেশটির কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ কিংবা এই সম্পর্কিত সরঞ্জাম না পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। কেননা সেগুলো দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে ব্যবহার করা হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।”

তবে রেজুলেশনটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড অন্য দেশগুলোকে এর বিপক্ষে ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অপরাধ আইনের পরামর্শ মানার যদিও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এর গুরুত্ব রয়েছে ও এটি ইসরায়েলের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, রেজুলেশনটি পাশের ক্ষেত্রে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ছিল না।

জাতিসংঘের নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, “সকল দেশের জন্য রয়েছে এক ভোট। বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অনুগ্রহ করে ইতিহাসের সঠিক দিকে অবস্থান করুন। যেখানে স্বাধীনতা, শান্তি ও আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে।”

অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন সাধারণ পরিষদের সমালোচনা করেছেন। তার অভিযোগ, গত বছরের ৭ অক্টোবর দেশটিতে হামাসের হামলায় বিষয়টির নিন্দা জানাতে প্ল্যাটফর্মটি ব্যর্থ হয়েছে।

ড্যানি ড্যানন বলেন, “রেজুলেশনটি প্রকৃতপক্ষে কূটনীতিক সন্ত্রাসবাদ। এক্ষেত্রে কূটনীতিকে বন্ধনে আবদ্ধ নয় বরং ধ্বংসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।”

এদিকে রেজ্যুলেশনটিতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বিষয়ক চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের আলোকে ইসরায়েল দ্বারা সংঘটিত নৃশংস অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায় খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আগামী এক বছরের মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। বস্তুত দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে রেজ্যুলেশনটি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছে। একইসাথে ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

অন্যদিকে গাজার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে হামলায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজার জন নিহত হয়েছে। একইসাথে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এরকম আরও খবর

Back to top button