গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রংধনু গ্রুপের পরিচালক ও রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ভাটারা থানার যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিজানুর রহমান রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. ওবায়দুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, ভূমি দখল, লুটপাট, মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর যেকোনো একটিতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, রফিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমানের মাধ্যমে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থের বিশাল একটি অংশ বিনিয়োগ করেছেন। বিশেষ করে দুবাই, সিঙ্গাপুর, কক্সবাজার ও ঢাকায় বিভিন্ন হোটেল এবং স্বর্ণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। রফিকুল-মিজানুরের মাধ্যমে বেনজীর আহমেদের বিদেশে বিনিয়োগের মধ্যে দুবাইয়ে রয়েছে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা।
রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বেনজীরের মালিকানায় থাকা দুবাইয়ের হোটেলটির নাম রয়্যাল কনকর্ড হোটেল অ্যান্ড সুইটস। বিলাসবহুল এই হোটেলটি দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থলে মাকতুম স্ট্রিটে অবস্থিত।
বেনজীরের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এই দুই ভাইয়ের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন সোনার ব্যবসা। তার জুয়েলারি শপটির নাম নিজি জুয়েলার্স। নিজি জুয়েলার্সের অবস্থান সিঙ্গাপুরের মুস্তফা মার্কেটের পাশে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি দেশ থেকে পাচার করে অর্ধশত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
শুধু দুবাই-সিঙ্গাপুরই শেষ নয়, বেনজীর আহমেদের অবৈধ টাকা রফিকুল-মিজানুরের মাধ্যমে কক্সবাজারের কলাতলিতে দুটি বিলাসবহুল হোটেলে বিনিয়োগ হয়েছে। হোটেল দুটির নাম হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্রিমিয়ার ও হোটেল রামাদা লিমিটেড।
রফিকুল-মিজানুর আয়নাঘরের কারিগর চাকরি হারানো বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে শতকোটি টাকার বাগানবাড়ি উপহার দেন। বেনজীর-জিয়াউলের মতো ক্ষমতা ধর ব্যক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন দুই ভাই।
জানা গেছে, মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ভোট জালিয়াতি করে মিজান রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। এর অংশ হিসেবে মিজানুর রহমানের অর্থ পাচারের অভিযোগও তদন্ত চলছে।
মিজানুর রহমান রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান ভাই রফিকুল ইসলামের ছত্রছায়ায় রূপগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে জমি না দেওয়ায় হিংসাত্মক হয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, মানুষকে বিনা অপরাধে মারধর, মাদক ব্যবসাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে রফিকুল ইসলামের গড়ে তোলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি। কারণ যারা কথা বলেছে ও মামলা করেছে, তাদের হয় খুন, নতুবা এলাকাছাড়া করেছেন মিজানুর রহমান। রফিকুল-মিজান মিলে দুই শতাধিকেরও বেশি পরিবার ঘরছাড়া করেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত ৪ ডিসেম্বর নৌ-পুলিশের সদস্যরা রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া বাজারের পাশে সেতুর নিচ থেকে শিশু ওসমান গণি স্বাধীনের লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, স্বাধীনকে রফিকুল ইসলামের নির্দেশে তার ভাই মিজানুর রহমান খুন করেন।
মিজানুর রহমানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে শিশু ওসমান গণি স্বাধীনের বাবা শাহিনুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে রফিক এলাকায় এত বেশি প্রভাবশালী যে, আমি সন্তান হত্যার মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি। থানায় গেলে হত্যার বদলে অপমৃত্যুর মামলা করতে পরামর্শ দেয় রূপগঞ্জ থানা-পুলিশ।
রফিক-মিজানের খুন, জমিদখল, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে বাহিনী ছিল উল্লেখ করে জয়নাল মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী জানান, রফিক তার বাহিনী নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এজন্য তার ভাই মিজানুর রহমান এলাকায় ৫০-৬০ জনের বাহিনী গড়ে তোলে। সবার কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী কবির হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এই নাওড়ায় রফিক ও মিজানের নিপীড়নের শিকার হননি এমন কোনো মানুষ নেই। সবার জায়গা জোর করে বালু ফেলে ভরাট করে দখলে নিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আজ আমাদের কিছু নেই। মিজানুর রহমান তার বাহিনী নিয়ে হামলা করে সব নিয়ে গেছে। বাড়ি থেকে আমাদের এক কাপড়ে বের করে দেয়। বাড়ির জমিও দখলে নিয়ে গেছে।’
সূত্র : দেশ রূপান্তর