গাজীপুরে ওসি’র পরকীয়া, বিয়ে ও তালাক: সাবেক ওসি, এসপিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি : গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মিজানুর ইসলাম এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেম, রিসোর্টে নিয়ে রাত্রি যাপন, বিয়ে ও তালাকের ঘটনায় এবার গাজীপুরের সাবেক এসপিসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা ও স্টেনোগ্রাফারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কায়সারুল ইসলামের আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ঝর্ণা আক্তার ওরফে বর্ষা (১৯)। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার দক্ষিণ স্বরমঙ্গল গ্রামের সৈয়দ মো. মিজানুর রহমান, গাজীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম, ওসি ডিবি দেলাওয়ার হোসেন ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের স্টেনোগ্রাফার মো. আব্দুল করিম।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা। সৈয়দ মো. মিজানুর রহমান মানিকগঞ্জ সদর থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় স্ত্রী সন্তানের কথা গোপন রেখে বিভিন্নভাবে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে তার দুলাভাইকে মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ভীতিসহ নানাভাবে হয়রানী করত। পরিবারের সদস্যদের হয়রানির কথা ভেবে এক পর্যায়ে ওসির প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হন। ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদরের এক বাসায় তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার কথা বলেন মিজান। পরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা বিভিন্ন রিসোর্টে ও থানার সরকারী কোয়ার্টারে রাত্রী যাপন করতে। এক পর্যায়ে ওসি মিজান গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় বদলী হয়ে আসেন। এরপর গাজীপুরের রিসোর্টেও এনেও স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতেন।
এভাবে ৪ দফায় ১০ দিন গাজীপুরের একটি রিসোর্টে বসবাসের পর গত ১৭ জানুয়ারি ওসি মিজান জানায় সে তাকে বিয়ে করেনি। তাকে চলে যেতে বলে। পরে ওই কলেজছাত্রী ঝর্ণার ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গাজীপুরের ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। পরে ওই ওসির প্রথম স্ত্রীর উপস্থিতিতে গত ১৮ জানুয়ারি কলেজছাত্রী ঝর্ণাকে বিয়ে করেন ওসি সৈয়দ মিজানুর রহমান। বিয়ের পর ওসি মিজান একদিনের জন্যও ছাত্রীর সাথে সংসার করেননি এবং কোন খোঁজখবর নেননি। গত এপ্রিল মাসে ওই কলেজছাত্রীকে তালাক প্রদান করেন ওসি মিজান।
রোববার দুপুরে কলেজছাত্রী ঝর্ণা আক্তার তার মাকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, রিসোর্ট থেকে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে তাকে গাজীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যায়। তার কাছে সব জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন। কিন্তু বিচার না করে উল্টো তিনিকে মিজানের সাথে বিয়ে দিয়ে ধর্ষণ মামলা থেকে রক্ষা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ওসি মিজানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে এসপি কাজী শফিকুল আলম তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন, মিরাজুল ইসলাম ও ওসি ডিবিকে ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ওসি মিজান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দায়সারা রিপোর্ট প্রদান করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। গাজীপুরের সাবেক এসপিসহ তার অধিনস্ত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি এ ঘটনার জন্য তাদের বিচার দাবি করেন।
জয়দেবপুর থানার সাবেক ওসি সৈয়দ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিয়ে করেছি। বনিবনা না হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে আইন মেনে তালাক দিয়েছি।
আরো জানতে…….