গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে বরাদ্দকৃত প্লটসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিল চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী এই রিট দায়ের করেন।
আবেদনে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ বাতিলসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এসব অবৈধ বরাদ্দের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রার্থনা করা হয়েছে। এছাড়া এসব বরাদ্দের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন সাবেক বিচারপতিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন আবেদনকারীদের পক্ষে রিটটি দায়ের করেন।
আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন— মো. রেজাউল ইসলাম, আল রেজা মো. আমির, মো. গোলাম কিবরিয়া, মোহাম্মদ হারুন, মো. বেলায়েত হোসেন সোজা, কামরুল ইসলাম রিগান, হাসান মাহমুদ খান, শাহীনুর রহমান শাহীন এবং মো. জিল্লুর রহমান।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট মিসবাহ জানান, নিজেকে অসহায় এবং নিঃস্ব বলে সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেও শেখ হাসিনা নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনে ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তার প্লট নম্বর ০০৯। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক।
শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির ৫৪ সুধা সদনের ঠিকানায় বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়। সম্প্রতি রাজউকে গিয়ে দেখা যায়, রেকর্ডরুমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর ইংরেজি বড় হরফে লেখা রয়েছে ভি-৩, পাতা ১৪১। ফাইলে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্রের কপি, বরাদ্দপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে।
রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয় ‘কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’শেখ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ০১৫ এবং ০১৭।
এর মধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ১০ নভেম্বর প্লটের মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এর আগে ২ নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপপরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।
তবে শুধু হাসিনা ও তার ছেলে-মেয়ে নন পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলে-মেয়ে। তাদের নামেও যথারীতি প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১৯।
রাজউকের আইন ও বিধি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু এই ৬টি প্লট নয় এরকম অন্যান্য প্লটের বরাদ্দ চ্যালেঞ্জ করে এই রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
রিটে আবেদনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউকের চেয়ারম্যান, পূর্বাচল প্রকল্প পরিচালক, শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।