আলোচিতরাজনীতিসারাদেশ

গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাবিসংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তার ওপর হামলা হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যান। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়, যেন তাকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”

ওসি বলেন, “গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মাসুদ। তার শারীরিক অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।”

পরিবার চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি নগরের বুধপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন।

২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এতে মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম পা-ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ। একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা ওই হামলা চালিয়েছিল।

এ হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। তার অন্য পা শনিবার রাতে ভেঙে দেওয়া হয়।

বোয়ালিয়া থানা হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদ বলেন, “আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম। আমি ছাত্রলীগ করতাম, ওইজন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে। রগ-টগ সব কাটা। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি।”

মাসুদকে যখন আনা হয়, তখন বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। অটোরিকশায় করে মাসুদকে থানায় আনলে কয়েকজন তাকে নামিয়ে থানার মেঝেতে শুইয়ে দেন।

মাসুদের মৃত্যুর খবর শুনে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “আমরা যে দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যেই আহত অবস্থায় একজনকে আনতে দেখলাম। কিন্তু কারা তাকে এনেছিল, তা চিনতে পারিনি।”

জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ।

শনিবার গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন তিনি।

 

সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

এরকম আরও খবর

Back to top button