কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র রবীন হোসেন গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি : কালীগঞ্জ পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রবীন হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি পুলিশ। তিনি কালীগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার রবিন হোসেন কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মৃত্যু বারেকের ছেলে। তিনি সপরিবারে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ম্যাগপাই রেস্টুরেন্ট থেকে রবীন হোসনকে স্থানীয়রা আটক করে ভাটারা থানায় জানায়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে স্থানীয়রা রবীন হোসেনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। রবীন হোসেন বর্তমানে ভাটারা থানা হেফাজতে রয়েছে। রবীন হোসেন কালীগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২১ নাম্বার আসামি। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। রবীন হোসনকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তুতি চলছে।
হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিনুর রহমান বলেন, হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রবীন হোসেন ভাটারা থানা হেফাজতে রয়েছেন। তাকে কালীগঞ্জ থানায় এনে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে থেকে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে রবীন হোসনকে স্থানীয়রা আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে। তাকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য: গত ২১ আগষ্ট রাত ১ টা ৪৫ মিনিটে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান শেখ বাবলু বাদী হয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ আওয়ামী লীগের ৪০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বেআইনি জনতাবদ্ধে অস্ত্রশস্ত্রসহ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুকুম দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, সাধারণ ও গুরুতর জখম করে হত্যা ও লাশ গুমের দায়ে ১৪৩,১৪৭,৪২৩,৩২৫,৩২৬,৩০৭,৩০২,২০১,১১৪,৫০৬,৩৪ ও ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন {মামলা নাম্বার ৪(৮)২৪}। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ২১ নাম্বার আসামি এস এম রবীন হোসন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৬ মে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা যুবদলের সম্মেলনে যাওয়ার সময় মেহের আফরোজ চুমকির নির্দেশে ও হুকুমে অন্য আসামিরা বিএনপি নেতা কর্মীদের বাঁধা দিতে মারধর করে। সে সময় বিকল্প পথ হিসেবে শীতলক্ষ্যা নদীপথে ট্রলারে করে সম্মেলনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুপুর ২ টার দিকে কালীগঞ্জ খেয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নেতাকর্মীদের ট্রলারের গতিরোধ করে আক্রমণ করে। সে সময় ট্রলারে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এর মধ্যে একজন যুবদল কর্মী চৈতারপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে জামির হোসেনকে (৪০) হত্যার উদ্দেশ্যে যুবলীগ নেতা মাইনুল তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে মারাত্মক গুরুতর জখম করে পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে অন্য আসামিরা ট্রলার থেকে জামির হোসেনকে নদীতে ফেলে দেয়। এছাড়াও যুবদলের আরেক কর্মী পলাশ উপজেলার ফিরিন্দা টেকপাড়া এলাকার আঃ আব্দুস সালামের ছেলে নাঈম হোসেনকে (২০) হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে সহিদুল ইসলাম ভুট্টো এবং অন্য আসামিরা নাঈমের মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রলার থেকে তাকেও নদীর পানিতে ফেলে দেয় এবং অন্য আসামিদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়া ট্রলারে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে কুপিয়ে প্রায় ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মীকে মারাত্মক জখম করে এবং সম্মেলনে যাওয়া বাধাগ্রস্ত করে। আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। উক্ত ভিকটিমরা তথা জমির ও নাঈমের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর কালীগঞ্জ খেয়া ঘাটের দক্ষিণ পাশ থেকে ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২০১১ সালের ৭ মে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে। সে সময় আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনার বিষয়ে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে আসামিদের বাঁধার কারণে তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অভিযোগ গ্রহণ করেননি। যার কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এস এম রবীন হোসন ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু বক্কর চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মাজেদুল ইসলাম সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা মাইনুল ইসলাম ও, সহিদুল ইসলাম ভুট্টো, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আহমেদুল কবির আবু খান সাধারণ, পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক কামরুল ইসলাম, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সারোয়ার হোসেন গাজী, মোক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম তোরণ, জামালপুরের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান খান ফারুক মাস্টার, বক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান পলাশ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ টিপু, পৌর যুবলীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর বাদল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফি রেজাউল রহমান খোকন, বাহাদুরসাদী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা অমিত, আলভি, লিখন। অন্য আসামিরা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
প্রসঙ্গত: উক্ত ঘটনায় ২০১১ সালের ৮ মে প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা হয় { নং ১৪/২০১১}। এরপর ৯ মে ১৬ জনের বিরুদ্ধে যুবদল নেতা ঘোনপাড়া এলাকার মৃত হাসিব উদ্দিনের ছেলে নাদিম আহমেদ বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা মাইনুল ইসলামসহ ১৬ জনের নামে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা (৯৫/২০১১) দায়েরের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ৫ জুন মামলাটি নথিভুক্ত করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ {মামলা নাম্বার ৩(৬)২০১১}। এরপর দীর্ঘদিন থানা পুলিশের চার জন তদন্ত কর্মকর্তা এবং পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের চারজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সকল আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য (নং-১৩) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর আদালত ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি পূণরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রায় সাত মাস তদন্ত কার্যক্রম করে ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পিবিআইও গোয়েন্দা পুলিশের মত সকল আসামির অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (সত্য -৫৭) দাখিল করেছেন।
আরো জানতে…….
কালীগঞ্জে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ ১১৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩ মামলা