গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব নিয়েই সম্প্রতি বলেছেন, ‘চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) সব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করা হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজনে বাতিল করা হবে। তারই অংশবিশেষ একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য তৈরি করা র্যাব সদর দপ্তর নির্মাণসহ (১ম সংশোধিত) ১৩টি প্রকল্প বিভিন্ন বিভাগে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প আবার পিইসি সভায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করতে হবে। তিনি যদি মনে করেন আগের প্রাক্কলিত খরচ ঠিক আছে, তবেই আলোর মুখ দেখবে। আর অস্বাভাবিক খরচ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হলে তিনি বরাদ্দ কমাবেন বা প্রকল্প বাতিল করবেন। এর ফলে অনেক প্রকল্প বাতিল হতে পারে।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু অর্থনীতি বিভিন্ন চাপে রয়েছে। তাই টাকা খরচের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হবে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নে এর আগেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে বর্তমানে অর্থনীতি যেহেতু চাপে রয়েছে, তাই অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে এগিয়ে যাবে। নতুন প্রকল্পে অবশ্যই এটা করতে হবে। কারণ এডিপিতে প্রকল্প নির্ধারণে রাজনৈতিক ব্যাপার থাকতে পারে। যেহেতু ঋণ করে সরকারকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই পরিকল্পনা কমিশনের অধিকতর যাচাই-বাছাই করাই শ্রেয়। তাতে কিছু প্রকল্প বাতিল হতে পারে। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্যার পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করি তিনি সুশাসনের সঙ্গে সাশ্রয়ীভাবে সবকিছুর সমাধানের রাস্তা দেখবেন।’
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস হলেন এই কমিটির চেয়ারপারসন। কমিটির বিকল্প চেয়ারপারসন হলেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কমিটির সদস্য সংখ্যা হচ্ছেন ১৩ জন। গত ২১ আগস্ট এ ব্যাপারে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রকল্প খরচ কাটছাঁট হবে।’ এর পরই ২৭ আগস্ট পরিকল্পনা বিভাগের একনেক শাখা থেকে চিঠি দিয়ে ভৌত অবকাঠামো, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে (ইতোপূর্বে সরকারপ্রধানের কাছে একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য তৈরি করা) ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ফেরত পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মোহাম্মদ নাজমুল হাসান খানের সই করা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে নিম্নের প্রকল্পগুলোর মূল ডিপিপি (সারসংক্ষেপ) পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেরত দেওয়া হলো।
ফেরত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আধুনিক মানের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ফোর্সেস সদর দপ্তর নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। ৪৯৬ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু করে ২০২৩ সালের জুনে বা সাড়ে পাঁচ বছরে শেষ করার কথা। কিন্তু অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তাই সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তালিকার মধ্যে রয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, তিলমারী এলাকায় (রমনা, জোড়গাছ, রাজীবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) নদীবন্দর নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল-কাম রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ উন্নয়ন এবং রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় মোংলা জয়মনিরঘোল জিসি-চিলা-জিসি-বৌদ্ধ বাজামারী বাজার জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। গাছবাড়িয়া সৈয়দ কুচিয়ার মোড় (বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরিদুল আলম সড়ক) শোলকাটা-কালাবিবির দীঘি যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প এবং ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ (১ম সংশোধিত)।
এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, ঢাকা সেটেলমেন্ট এবং প্রেসের কর্মচারীদের জন্য নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (৩য় পর্যায়) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়) এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টিনিরাপত্তা জোরদারকরণ (২য় পর্যায়)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে বলছেন, এই চিঠি পাওয়ার পর আবার যাচাই-বাছাই করতে হবে বিভিন্ন প্রকল্প। এ পর্যায়ে অনেক প্রকল্প বাদ যাবে। কারণ চলতি অর্থবছরের জন্য শেখ হাসিনার সরকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দিয়েছিল। তাতে মোট প্রকল্প ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৭টি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাঠানো হলে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় সঠিকভাবে যাচাই করে একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য অসংখ্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হয়।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব নিয়ে স্পষ্ট বলেছেন, বড় বড় প্রকল্পে নকশা খরচে অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্পে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। তাই ব্যয় সংকোচন করতে বা অপচয় ঠেকাতে প্রকল্প যাচাই-বাছাই করা খুব প্রয়োজন।
সূত্র : খবরের কাগজ