আলোচিতজাতীয়রাজনীতি

শেখ হাসিনার উত্থান-পতন

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ১৯৮১ সালের এক রোদেলা বিকেলে দিল্লি থেকে ঢাকায় অবতরণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে এক রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে তার বাবা শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুর ছয় বছর পর তিনি দেশে ফেরেন।

দলকে পুনর্জ্জীবিত করতে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক সেদিন স্বাগতম জানান সে সময়ের ৩৩ বছর বয়সি হাসিনাকে। দিনটি ছিল ১৭ মে। সে সময় বাংলাদেশের শাসনভার ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে।

আওয়ামী লীগের চলমান অন্তঃকোন্দল দলটিকে বিভক্ত করে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা এসে সে দলকেই পুনর্গঠনে মনোযোগ দিলেন। তার ফেরার দু’সপ্তাহের মাথায় আরেকটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানে মারা যান জিয়া। খুব দ্রুতই আরেকটি রাষ্ট্রীয় নির্বাচনের আয়োজন করা হয় এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ড. কামাল হোসেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনে হেরে যান বিএনপি প্রার্থী বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের কাছে। তবে এ সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আরেকটি অভ্যুত্থান মঞ্চস্থ করে দেশের ক্ষমতায় আসেন জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।

এরপরই স্বৈরাচারের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারে আন্দোলনে নামেন শেখ হাসিনা। সে সময় এরশাদের পতন ঘটাতে তিনি ও বিএনপির বেগম খালেদা জিয়া জামায়াত-ই-ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামেন।

১৯৮৬ সালে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন এরশাদ। তিন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হঠাৎই সিদ্ধান্ত পাল্টে নির্বাচনে অংশ নেন হাসিনা এবং ভোট কারচুপির কারণে ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৭৩টি আসনে জয় লাভে করে খুব বাজেভাবে পরাজিত হন তিনি। এরশাদের জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জয়ী হয়।

এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বুদ্ধিমান হাসিনা আবারও বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলান এবং সম্মিলিত আন্দোলেনে যোগ দেন।

এরশাদের পতন ঘটাতে চার বছর সময় লেগেছিল তাদের। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতন হয় এরশাদের এবং ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বিচারক শাহাবুদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পরও নির্বাচনে ভরাডুবি হয় শেখ হাসিনার। তার আওয়ামী লীগ মাত্র ৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। হতবাক হাসিনা নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার অভিযোগ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে যতো গুলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এটি একটি।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় হাসিনা বিচারপতি বদুরুল হায়দার চৌধুরীকে বাছাই করেন। বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াত নেতাদের সমর্থনের আশায় দলের আমির গোলাম আজমের সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু এ পরিকল্পনাও ভেস্তে যায় এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রহমান বিশ্বাস।

বিএনপি’র শাসনামলের তিন বছরেই হাসিনা বুঝে যান, পরবর্তী নির্বাচন যদি বিএনপির অধীনে হয় তাহলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। তাই তিনি নতুন করে জামায়াতের নীতি অনুসরণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকেন।

এ সময় শেখ হাসিনা জাতীয় পার্টি ও জামায়াত-ই-ইসলামের সঙ্গে জোট গঠন করেন এবং হরতালসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংস আন্দোলেনে নামেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে।

কিন্তু সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানে না থাকায় তা সংশোধনের জন্য সংসদীয় আসনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন যা বিএনপির ছিল না। তাই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৯৬ সালে বিএনপি নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তা বর্জন করে আওয়ামী লীগ, জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি।

বিরোধীদলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিএনপি অধিকাংশ আসন লাভ করে এবং সংবিধানে একটি সংশোধনী এনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করে। এই নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, যার প্রধান হিসেবে প্রথম পছন্দ হবে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।

পরবর্তীতে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পরে ১৯৯৬ সালের জুনে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এইবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। শেখ হাসিনা আবারও বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। তার এ পদক্ষেপ সেদিন ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল কারণ শাহাবুদ্দিন তার সততা, বিশুদ্ধতা ও সোজাসাপ্টা কথার জন্য জনপ্রিয় ছিলেন।

শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের শেষের দিকে, তার গঠিত সরকার প্রণীত একটি আইনের অধীনে ১ টাকা টোকেন মূল্যে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন বরাদ্দ দেন। যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় এবং তিনি নির্বাচনের আগে গণভবন ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির কাছে লজ্জাজনক পরাজয় হয় হাসিনার। তার দল মাত্র ৬২টি আসন পায়। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ করেন এবং প্রাথমিকভাবে শপথ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি তারই নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে অত্যন্ত বাজেভাবে অপমান করতে থাকেন, কারণ তিনি মনে করেছিলেন এ সাবেক বিচারপতি তাকে নির্বাচনে যথার্থ সহযোগিতা করেননি।

শেখ হাসিনা এবং তার আইনপ্রণেতারা সংসদে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে সংবিধানের একটি বিধান অনুযায়ী, ৯০টি বৈঠকে টানা অনুপস্থিতির কারণে সংসদীয় সদস্যপদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে, তাই শেখ হাসিনা সংসদে ফিরে আসেন।

পরবর্তী নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বিএনপি সংবিধানে সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির অবসর গ্রহণের বয়স বাড়িয়ে দেয়, যাতে বিএনপির পছন্দের ব্যক্তি বিচারপতি কে. এম. হাসান আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ প্রধান হিসেবে কে. এম. হাসানকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং বড় আন্দোলনের ডাক দেয়। এ আন্দোলন এতটাই সহিংস রূপ ধারণ করে যে, জানুয়ারি ২০০৭-এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং একটি সেনাবাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

শেখ হাসিনাকে লন্ডনে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। তবে খালেদা জিয়া দেশ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে, শেখ হাসিনা মনে করেন যে রাজনৈতিকভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে তিনি পিছিয়ে পড়ছেন এবং বাড়ি ফিরে আসতে চান। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রাথমিকভাবে তার দেশে ফেরার প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করে। পরে তাকে দেশে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। খালেদা জিয়াকেও কারাগারে পাঠানো হয়।

পশ্চিমা গণমাধ্যমে ‘যুদ্ধরত বেগম’ হিসেবে পরিচিত দুই নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরানোর জন্য বহু চেষ্টা চালানো হয়। তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া মুক্তি পান।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ব্যাপক ভোটে জয় লাভ করেন এবং পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনে আসেন। তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ‘পরিবর্তনের সনদ’ প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সংঘাতমূলক রাজনীতি শেষ করা হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা হবে, একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা হবে, বিচার ব্যবস্থা, সংসদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা হবে।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হন এবং তার স্বৈরশাসনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেতে শুরু করে। তিনি বিরোধী মতামতের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে শুরু করেন, সংবাদমাধ্যম তার কঠোর আক্রমণের শিকার হয় এবং তিনি বিএনপিকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেন।

এরপর তিনি সবচেয়ে ভয়াবহ কাজটি করেন। তিনি সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করেন, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ শেষ করে দেয়।

বাকিটা ইতিহাস। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি-নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কট করে, কারণ তারা বলেছিল, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ নিহত হন।

কিন্তু শেখ হাসিনা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করেন। তার দলের সদস্যরা ১৫৩টি আসনে এককপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি এমন একটি সংসদের বৈধতা নিয়ে কোনো চিন্তা করেননি।

স্বৈরশাসনের দিকে আরও এক পদক্ষেপ হিসেবে শেখ হাসিনা সংবিধানে সংশোধনী এনে সংসদকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অক্ষমতা বা অসদাচরণের অভিযোগে অপসারণের ক্ষমতা প্রদান করেন, যা আগে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের অধিকার ছিল।

কিন্তু এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয়, যার কারণে শেখ হাসিনার রোষের শিকার হন তৎকালীনি বিচারপতি। তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

পরবর্তীকালে ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু শেখ হাসিনা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন, যা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করে। এই সময়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে ছিলেন।

কিন্তু নির্বাচনের আগের রাতেই ভোটের ব্যালট বাক্স ভরা হয়, যা নির্বাচনে জালিয়াতির সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ ছিল। প্রশাসন এতটাই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে উঠেছিল যে এটি পূর্ণরূপে জালিয়াতির অংশগ্রহণ করে। এই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়।

পুনরায় ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিরনা আরও বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন। তিনি বিরোধী কণ্ঠরোধের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো কড়া আইন পাস করেন। সংবাদমাধ্যম আইন ও তার গোয়েন্দা বাহিনী এসব ব্যবহার করে সবকিছু স্তব্ধ এবং ভয়ভীতির মধ্যে রেখেছিল। একটি ভয়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সমস্ত সমালোচনা দমন করা হয়। এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়ে যায়।

এই সময়ের মধ্যে যে সব প্রতিষ্ঠানকে তিনি শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো একে একে ধ্বংস হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন নিষ্প্রভ হয়ে যায়। মানবাধিকার কমিশন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকে। তার সরকার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বারংবার আহ্বান উপেক্ষা করে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সংসদ তার প্রতি এতটাই অনুগত হয়ে ওঠে যে, এটি কখনও তার মন্ত্রিসভার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেনি। এর একমাত্র কাজ ছিল তাকে প্রশংসা করা।

এরপর তিনি ‘কাল্ট সংস্কৃতি’র নীতিতে এগোতে থাকেন। তিনি তার মৃত বাবার স্মৃতিকে ধরে রাখতে উত্তর কোরিয়ার মতো, অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনে বাধ্য করেন এবং ২০২০ সালকে ‘মুজিব বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেন।

তিনি তখন সম্পূর্ণভাবে চাটুকার এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে গিয়েছিলেন। তারা কেবল তার প্রশংসা ও দেশের অসত্য চিত্র উপস্থাপন করতেন। তিনি উন্নয়নের মিথকে নিজের গর্ব হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেন। অবকাঠামো নির্মাণের প্রাকৃতিক প্রবাহকে তার একক কৃতিত্ব হিসেবে দেখাতে শুরু করেন। আর দুর্নীতির কারণে প্রকল্পগুলোর খরচ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আর্থিক খাত ব্যাপক দুর্নীতিতে আক্রান্ত হয়ে যায়। ব্যাংক থেকে টাকা উঠানো হলে তা আর কখনও ফেরত আসত না।

যে ক্রোনি পুঁজিবাদ বিকশিত হয়েছিল, তা প্রকল্পগুলোকে গ্রাস করে ফেলছিল। শেখ হাসিনার এসবের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং এমনকি তাদের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন। অর্থনীতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, মূল্যস্ফীতি দেশে প্রকট হয়ে ওঠে এবং বৈষম্য আরও বাড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে, ২০২৪ সালে তিনি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নির্বাচনের আয়োজন করেন, যা অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু এ নির্বাচনও ছিল তার উপহাস আর অবজ্ঞার মূর্ত রূপ।

শেখ হাসিনার আয়োজিত এ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো। নতুন কৌশল হিসেবে তিনি নিজের দলের সদস্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়ে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক দেখানোর চেষ্টা করেন। এ প্রতারণামূলক নির্বাচনের পর বাকিটা ইতিহাস।

 

সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

এরকম আরও খবর

Back to top button