গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা করা হচ্ছে। এতে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কয়েকটি জেলায় সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
৫ ঘণ্টা ধরে উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ অবস্থায় থানা থেকে অনবরত ছুড়তে থাকা রাবার বুলেট ও গুলিতে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন আন্দোলনকারী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
যশোরের চিত্রা মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন জাবির ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে আগুন দিয়েছে একদল লোক। এতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ২৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হোটেলটিতে আরও মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাভারে থানা দখল করতে গেলে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশের উপর্যুপরি গুলিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা গেছেন নারীসহ ৯ জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ দেড় শতাধিক মানুষ।
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও শতাধিক লোক।
কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার বিকেলে শহরের আদর্শপাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা সদরের ৯ নম্বর পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফর হিরণের বাড়িতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। তার লাশ রাতে শহরের পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা। একই সময় চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আক্তার হোসেন গণপিটুনিতে মারা যান।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পোড়া বাসভবন থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গায় দুই সংসদ সদস্যের বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন নেতার বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এসময় যুবলীগ নেতা আরেফিন আলম রঞ্জুর বাড়িতে আগুনে দগ্ধ হয়ে অজ্ঞাত চার যুবক নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
সরকারি চাকরিতো কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন এক পর্যায়ে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনে রোববার (৪ আগস্ট) সারাদেশে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এর আগে আরও আড়াই শতাধিক মানুষ মারা যায়। সব মিলিয়ে এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলো। এছাড়া আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার।