নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থীকে নিয়েই চিন্তায় মার্কিন ভোটাররা
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনি বিতর্কে পিছিয়ে পড়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের মধ্যেই তার বয়স নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরও একটি মেয়াদে দেশ পরিচালনার জন্য জো বাইডেন মানসিকভাবে উপযুক্ত কী না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
অন্যদিকে অনেক মার্কিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও তারা পুরোপুরি উপযুক্ত মনে করেন না।
নির্বাচনি বিতর্কে বিপর্যয়ের ঘটনার পর মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের করা নতুন এক জরিপের ফলাফলে এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
রোববার প্রকাশিত ওই ফলাফলে বলা হচ্ছে, নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই মনে করেন যে, আরও একটি মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার মতো মানসিক সুস্থতা মি. বাইডেন নেই।
এর আগের একটি জরিপে ৬৫ শতাংশ ভোটার একই কথা বলেছিলেন। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনি বিতর্কের পর সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে সিবিএস নিউজের জরিপে বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনের আরেক প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও প্রায় কাছাকাছি ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
জরিপে প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোটার বলছেন যে, প্রার্থী হিসেবে তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. ট্রাম্পকেও মানসিকভাবে উপযুক্ত মনে করেন না।
তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য যে বিষয়টি কিছুটা বেশি উদ্বেগের। কারণ জরিপে অংশগ্রহণকারী তার নিজ দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন যে,জো বাইডেনে উচিৎ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দলের অন্য কাউকে সুযোগ করে দেওয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দু’জন প্রার্থীই বেশ বয়স্ক। জো বাইডেনের বয়স এখন ৮১ বছর, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৮ বছর।
কাজেই তাদের বয়স নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ বেশ আগে থেকেও লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা বিষয়টিকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
ওই দিন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক টেলিভিশন বিতর্কে মি. বাইডেন প্রায়ই কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন এবং তাকে খুব একটা আত্মবিশ্বাসীও দেখাচ্ছিলো না।
মূলতঃ এই ঘটনার পরেই তার দলের সমর্থকদের মধ্যেই অনেকে মি. বাইডেনের বয়স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তবে মি. বাইডেনের এই দুঃসময়ে পাশে রয়েছেন তার পরিবার ও মিত্ররা। নির্বাচনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য মি. বাইডেনকে তারা উৎসাহও দিচ্ছেন।
তারপরও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সবাই এখনও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একজন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জেমি রাস্কিন রোববার মার্কিন গণমাধ্যম এমএসএনবিসি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দলের বর্তমান অবস্থাকে “কঠিন পরিস্থিতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন যে, “এটি (মি. বাইডেনের ইস্যু) নিয়ে আমাদের দলের প্রতিটি স্তরে বেশ সততা ও গুরুত্বের সঙ্গে জোরালো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।”
তবে শেষপর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কী না, সে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট মি. বাইডেন নিজেই নিবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
“প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, আমাদের দলের সদস্যরা সব সময়ই একসঙ্গে কাজ করবেন। তাছাড়া আমাদের দলেরও মি. বাইডেনের প্রয়োজন রয়েছে,” বলেন কংগ্রেসম্যান জেমি রাস্কিন।
বৃহস্পতিবারের বিতর্কের পর মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, ওই বিতর্কটিতে মি. বাইডেন তার সেরাটা দিতে পারেননি।
কিন্তু তাই বলে জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে সরে যেতে হবে বলে মনে করেন না তারা।
সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিসও রোববার এমএসএনবিসি-কে বলেছেন যে, নির্বাচনি বিতর্কটি অবশ্যই “একটি ধাক্কা ছিল”।
তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, মি. বাইডেন আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন।
তবে সিবিএস নিউজের নির্বাচনি জরিপের ফলাফলের সঙ্গে অবশ্য জো বাইডেনের সমর্থকদের অনেকেই একমত নন।
গত শনিবার জো বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারাভিযানের চেয়ারওম্যান জেন ও’ম্যালি দাবি করেছেন যে, সিবিএসের জরিপে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বরং অল্পকিছু সমর্থকদের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।
নির্বাচনি বিতর্কে যা ঘটছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের টেলিভিশন বিতর্ক একে অন্যকে লক্ষ্য করে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ করেছেন দুই প্রধান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরে সিএনএনের স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত ওই বিতর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একপ্রকার কোণঠাসাই করে ফেলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট কেইটি কে বলছেন যে, এবারের বিতর্কের ফরম্যাট ছিল আমেরিকানদের জন্য তুলনামূলক ভালো।
তবে সঞ্চালকরা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেননি এবং এটা ছিল জো বাইডেনের জন্য একটি খারাপ রাত।
তার অনেক জবাবই পরিষ্কার ছিল না এবং তাকে বয়স্ক মনে হচ্ছিলো।
তবে বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপ তার জন্য কিছুটা ভালো ছিল এবং তিনি কিছুটা শক্তি পেয়েছিলেন। তবে এটি হতে হতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।
বিতর্কে শেষমেশ ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন।
ফলে ৮১ বছর বয়সী মি. বাইডেন নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সামলাতে পারবেন কী না, এখন সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এমনকি নির্বাচনের প্রার্থিতা থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর কথাও তুলছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকদের অনেকে।
বিতর্কে মি. বাইডেনের পরাজয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বিভিন্ন দেশ, এমনকি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোও বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানা যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবারই এ ধরনের নির্বাচনি বিতর্কে প্রার্থীদের মুখোমুখি হতে দেখা যায়।
সেখানে তারা একে অন্যকে লক্ষ্য করে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণও করে থাকেন।
আগামী ৫ই নভেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে এবার দুই প্রধান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সেটি করছেন।
বিতর্ককালে তারা পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার সময় তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীর বিষয়ে মি. বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন।
অন্যদিকে, আদালতে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন মি. বাইডেন।
বিতর্কে মি. ট্রাম্প শেষ করেছেন এই বলে যে আমেরিকার মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। “সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি”।
অন্যদিকে, শেষ বক্তব্যে ডোনাল্ড বাইডেন আমেরিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন যে তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সাথে দাবি করেন যে ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দিবেন।
জো বাইডেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বন্দুক আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি তুলেছিলেন।
বয়স নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা
মি. বাইডেনকে তার বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় যে তিনি যখন দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করবেন তখন তার বয়স হবে ৮৬। তিনি হবেন সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট জবাবে বলেন একসময় তিনি সবচেয়ে কমবয়সী আইনপ্রণেতা বলে সমালোচনার শিকার হতেন এবং ট্রাম্প “তিন বছরের ছোট এবং অনেকটাই কম যোগ্য”।
“রেকর্ড দেখুন। দেখুন তিনি যে ভয়ানক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি,” বলছিলেন মি. বাইডেন।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলা হয় যে তার বয়স এখন ৭৮ এবং দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তা হবে ৮২ বছর।
জবাবে ট্রাম্প বলেন তার স্বাস্থ্য ভালো এবং তিনি এ সময় গলফ খেলার প্রসঙ্গও টেনে আনেন।
“তিনি এটা করেন না। তিনি ৫০ গজ দূরেও বল পাঠাতে পারেন না,” ট্রাম্প বলছিলেন।
তিনি আরও বলেন “আমার মনে হয় আমি ২৫-৩০ বছর আগের মতোই ভালো অবস্থায় আছি। সত্যি বলতে, আমি এখন আরও উজ্জ্বল।”
সূত্র : বিবিসি