গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের শেয়ার বা অংশীদারত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু ভারতসহ সার্কভুক্ত সাত দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ক ফিন্যান্স ডেটা সেন্টার থেকে ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমেছে ৩০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় পরিশোধ হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয় ১০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ছিল ১৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। পরের অর্থবছরে (২০২২-২৩) সে ব্যয় ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন।
হিসাব অনুযায়ী সার্ক দেশসমূহে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ের প্রায় ৯২ শতাংশই ভারতের শেয়ার। অর্থাৎ সার্ক দেশসমূহে বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের সিংহভাগই যায় ভারতে।
এ ছাড়া পাকিস্তান থেকে আমদানি ব্যয় কমেছে ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানকে আমদানি বাবদ পরিশোধ করা হয় ৮০ কোটি ১৭ লাখ ডলার। পরের অর্থবছরে সেই ব্যয় কমে হয় ৬৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ে পাকিস্তানের শেয়ার ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয় ছিল ৬৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশসমূহের শেয়ার মাত্র ১৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বাকি ৮৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ আমদানি ব্যয় হয় সার্কের বাইরের দেশসমূহে।
সার্কের সাত দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ রপ্তানি আয় ছিল ১৯৩ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমে হয়েছে ১৯১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার ডলার।
আমদানি বাণিজ্যে বৃহৎ অংশীদার ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে উন্নতি নেই। এ ছাড়া নেপাল ও পাকিস্তানের সঙ্গে রপ্তানি আয় বেশ কয়েক বছর ধরে ওঠানামা করছে। তবে শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি সামান্য বেড়েছে। বাংলাদেশের বৈশ্বিক রপ্তানি আয় বিবেচনায় সার্ক দেশসমূহের শেয়ার মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সার্কে শুধু ভারতই বাংলাদেশের বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। সমস্যা হলো আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য নেই। আমরা যা তৈরি করি, ওরা তাই তৈরি করে। রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে সেসব পণ্য লাগবে, যেগুলো ওরা তৈরি করতে পারে না বা করে না। গার্মেন্টস রপ্তানি একটু বেড়েছে। তবে বাণিজ্য বাড়াতে আমরা টাকা-রুপি লেনদেন সুবিধা চালুর দাবি জানিয়েছিলাম। রুপিতে শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশের ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কারণে তা এগোচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আমার অনুরোধ থাকবে, টাকায় আমদানি সুবিধা বা এলসি (আমদানি ঋণপত্র) খোলার ব্যবস্থা করতে। তাহলে প্রায় ২ বিলিয়ন সমপরিমাণ ডলার আমাদের সাশ্রয় হবে।’
এদিকে সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে রেমিট্যান্স আন্তপ্রবাহের বেশির ভাগ বাংলাদেশে আসে মালদ্বীপ থেকে। সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশে আসা বার্ষিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। মোট বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের মাত্র ১ শতাংশেরও কম আসে সার্ক দেশসমূহ থেকে। এর পরিমাণ মাত্র ৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে মালদ্বীপের শেয়ার ৬৫ শতাংশ। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ থেকে সার্কভুক্ত দেশসমূহে বহির্গামী রেমিট্যান্সের কথা বলা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনটির সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সার্কভুক্ত দেশসমূহে অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার প্রভাবে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার বড় অংশ আমদানি বাণিজ্যে একটি বড় পরিবর্তন করতে হয়েছে। আশার কথা হলো, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আবারও গতিশীলতা সৃষ্টি হতে চলেছে। আগামী দিনগুলোতে আমদানি বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র : খবরের কাগজ