গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে কাঞ্চনগামী সিএনজি-অটোরিকশা চালককে বেনজীর আহমেদের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি আড়চোখে তাকালেন। তারপর একগাল হাসি দিয়ে বললেন, ‘উঠেন, নামিয়ে দিব।’ প্রায় ৩০ মিনিট যাত্রার পর আনন্দ হাউজিং সোসাইটির প্রবেশপথে নামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনার চোক্ষে যেই বাড়িডা বেশি সুন্দর লাগবো, ওইটাই বেনজীরের বাড়ি।’
এ হাউজিংয়ে হাতেগোনা কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। তাই বেনজীর আহমেদের দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটি চিনে নিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। পুলিশের সাবেক এ মহাপরিদর্শকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত তার বাংলোবাড়িটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
আনন্দ হাউজিং সোসাইটি মূলত পুলিশ পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত। হাউজিংয়ের স্টাফরা জানান, প্রতি কাঠা জমি ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানেই ২৪ কাঠা জমি কিনে বাংলোটি তৈরি করেছেন বেনজীর।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার আগে এ বাড়ির মালিকের পরিচয় সেভাবে প্রচার না হলেও বর্তমানে উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় সব বয়সি মানুষের কাছেই পরিচিত এ বাড়িটি। বিকেল হলেই হাউজিংয়ে খোলা মাঠে বেড়াতে আসা মানুষ আগ্রহ নিয়ে তাকান বাড়িটির দিকে।
বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার ও হাউজিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী জানান, ২০২২ সালের দিকে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ‘বেনজীর আহমেদ দেশে থাকলে মাঝেমধ্যেই এ বাড়িতে আসতেন, রাত্রিযাপনও করতেন।’
বাংলোটিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কেয়ারটেকারের পাশাপাশি দুটি কুকুরও রাখা হয়েছে।
বুধবার (১২ জুন) আদালতের আদেশে তৃতীয় দফায় জব্দ করা হয়েছে বেনজীর আহমেদের আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ। সে তালিকায় রয়েছে এ বাংলোটিও। বলা হচ্ছে, বাড়িটির মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও তিন কন্যার নামে অস্বাভাবিক পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পাওয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
শিগগিরই বেনজীর ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
‘অনুসন্ধান এখনো চলমান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, কানাডা ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বেনজীরের সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। আরও যদি সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলোও জব্দের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবে দুদক,’ বলেন তিনি।
এদিকে আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধপথে অর্জিত সম্পদকে বৈধ করার বিধান রাখার পর প্রশ্ন ওঠে, বেনজীর আহমেদের মতো ব্যক্তিরা, যারা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ তৈরি করেছেন, তারাও এ সুযোগের সুবিধাভোগী হতে পারবেন কি না।
তবে ৭ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বেনজীর তার অভিযুক্ত অবৈধ সম্পদ সাদা করার সুবিধা পাবেন না।
‘যেহেতু বেনজীর আহমেদের মামলা ফৌজদারি ও আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় পড়ে, তাহলে বিষয়টা কীভাবে বৈধ হয়ে যাবে ট্যাক্স দিলে?’ বলেন তিনি।
সূত্র : টিবিএস