স্বল্প পুঁজি নিয়েও দুর্দান্ত লড়াই: পরাজয়ের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মাশরাফিদের
গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ। স্বল্প পুঁজি নিয়েও দুর্দান্ত লড়াই করেছেন সাইফউদ্দিন-মোসাদ্দেক-সাকিব-মিরাজরা। ইনিংসের শেষ দিকে টাইগার বোলারদের নৈপুণ্যে পরাজয়ের দুয়ারে থেকেও ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ভালো খেলেও পরাজয়ের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মাশরাফিদের।
বুধবার প্রথমে ব্যাট করে ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১৭ বল হাতে রেখে ২ উইকেটের জয় পায় নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের পথেই ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট শিকার করে দলকে খেলায় ফেরান সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
শেষ দিকে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪৮ বলে ৩৩ রান। ৪৩তম ওভারে মাত্র ৬ রান খরচ করে গ্রান্ডহোমকে সাজঘরে ফেরান সাইফউদ্দিন। ঠিক পরের ওভারে মাত্র ২ রানে জেমস নিশামকে আউট করার মধ্য দিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
উইকেট শিকারের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে না পারায় শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে নিতে হয় সাকিব-তামিমদের।
২৪৫ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে দলীয় ৫৫ রানে সাকিবের অফ স্পিনের বিভ্রান্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরো। দুই ওপেনারকে হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া দলকে খেলায় ফেরান কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর। তৃতীয় উইকেট ১০৫ রানের অনবদ্য জুটি গড়েন তারা। তাদের এই জুটিতেই জয় দেখে নিউজিল্যান্ড।
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটান মেহেদী হাসান মিরাজ। তার অফস্পিনে ২ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ৭২ বলে ৪০ রান করা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। একই ওভারের শেষ বলে টম লাথামকে আউট করেন তিনি।
তবে মুশফিকের একটি ভুলের কারণে বড় জুটি গড়ে টেইলর ও উইলিয়ামসন। ব্যক্তিগত ৭ রানেই সাজঘরে ফেরার কথা ছিল উইলিয়ামসনের। দারুণ থ্রো করেছিলেন তামিম ইকবাল। বল ধরে উইকেট ভাঙতে গেলেন মুশফিক। কিন্তু বল ধরার আগেই কনুই দিয়ে উইকেট ভেঙে ফেলেন তিনি। অথচ ছেড়ে দিলেও সরাসরি উইকেট ভাঙত।
আর তাতেই লাইফ পান কিউই অধিনায়ক। তখন ৭ রানে ব্যাট করছিলেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের দলীয় রান ছিল ১২ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৬৭।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৮.৩ ওভারে ৪৫ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাওয়া সৌম্য ২৫ বলে ২৫ রান করতেই ম্যাট হেনরির গতির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
এরপর ১৫ রানের ব্যবধানে ফেরেন তামিম ইকবাল। লুকি ফার্গুনসনের বলে বাজে শট খেলে আউট হন তামিম। তার আগে ৩৮ বলে মাত্র ২৩ রান করেন দেশ সেরা এ ওপেনার। দলীয় ৬০ রানে ২ ওপেনারকে হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পরে বাংলাদেশ।
এরপর সাকিব-মুশফিকের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। এই জুটিতে তারা ৫০ রান যোগ করেন। দলীয় ১১০ রানে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম।
এর আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই জুটিই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪২ রান করেছিল। বুধবার রান আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ১৯ রান করেন মুশফিক। তার বিদায়ের পরও দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যান সাকিব।
আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ রান করা সাকিব, বুধবার ফেরেন ৬৮ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৬৪ রান করে। তার আগে মুশফিকের সঙ্গে ৫০ আর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে গড়েন ৪১ রানের জুটি।
সাকিবের বিদায়ের পর দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মেহেদী হাসান মিরাজরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের কারণে বড় ইনিংস গড়া সম্ভব হয়নি। তবে শেষ দিকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকান সাইফউদ্দিন। ২৩ বলে তিনটি চার দলের হয়ে একমাত্র ছক্কা হাঁকিয়ে ২৯ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন সাইফউদ্দিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪/১০ (সাকিব ৬৪, সাইফউদ্দিন ২৯, মিঠুন ২৬, সৌম্য ২৫, তামিম ২৪; ম্যাট হেনরি ৪/৪৭, ট্রেন্ট বোল্ট ২/৪৪)।
নিউজিল্যান্ড: ৪৭.১ ওভারে ২৪৮/৮ (টেইলর ৮২, উইলিয়ামন ৪০, নিশাম ২৫, গাপটিল ২৫, মুনরো ২৪; সাইফউদ্দিন ২/৪১, মিরাজ ২/৪৭, সাকিব ২/৪৭, মোসাদ্দেক ২/৩৩)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী।