গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কৃষি জমি সুরক্ষায় করা খসড়া আইন দ্রুত পাস করতে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে ঘোষিত হাই কোর্টের রায় প্রকাশ হয়েছে।
রায়ে একই সঙ্গে একটি দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে দ্বীপ উন্নয়ন আইন প্রণয়নেরও পরামর্শ দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গত মঙ্গলবার ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
হাই কোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ ২০২২ সালের ২ জুন একটি মামলার রায়ে এমন পরামর্শ দেয়।
রায়ের অনুলিপি দেশের সব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কাছে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁর মো. মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে ভূমি অফিসের দেওয়া নোটিস অবৈধ ঘোষণা করে এ রায় দেওয়া হয়।
মিজানুর রহমানের মামলার নথি থেকে জানা যায়, ওই ব্যক্তি তার জমিতে একটি পুকুর খনন করছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা-কুশুম্বা ভূমি অফিস মিজানুর রহমানকে চিঠি দিয়ে ওই পুকুর খনন করতে নিষেধ করা হয়। এতে ২০১০ সালের বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।
এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে মিজানুর ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনে নিজের জমিতে পুকুরটি খননের অনুমতি চান।
কিন্তু জেলা প্রশাসক ওই আবেদন নিষ্পত্তি না করায় মিজানুর এ নিয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। হাই কোর্ট ১৫ দিনের মধ্যে মিজানুরের আবেদন নিষ্পত্তি করতে নওগাঁর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়।
এরপর ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল নওগাঁর রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর দরখাস্তটি নিষ্পত্তি করে দেন। কিন্তু রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরের ওই আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মিজানুর আরেকটি রিট আবেদন করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় আসে।
রায়ে বলা হয়, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪ পর্যালোচনায় এটি পরিষ্কার যে বিপণন তথা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান থেকে মাটি বা বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু স্বীকৃত মতেই আলোচ্য মোকদ্দমায় দরখাস্তকারী বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোনো মাটি উত্তোলন করছেন না।
এতে বলা হয়, “ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিধিনিষেধ আরোপ করে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ এর খসড়া প্রণয়ন করা হলেও কোনো এক অজানা কারণে এটি এখনও আলোর মুখ দেখছে না।”
তাই ‘কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬’ দ্রুত জাতীয় সংসদে পাস করাতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে রায়ে সংবিধানের ৪২ (১) অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২ (১) মোতাবেক সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কেবলমাত্র সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নাগরিকের উপরোল্লিখিত সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর এবং যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনে বিধি নিষেধ আরোপ করা তথা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”
নওগাঁর রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টটরের ২০১৯ সালের গত ১৬ এপ্রিল দেওয়া আদেশ আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হওয়ায় এর কার্যকারিতা নেই বলে রায়ে বাতিল করা হয়েছে।