গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ডা. তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি এই সিটি করপোরেশনসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা–৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে।
বাহাউদ্দিন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে আছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহসীন বাহার। স্থানীয় সরকারের এই উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না থাকায় বাস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহসীন। তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন সাবেক বিএনপি নেতা মো. মনিরুল হক (সাক্কু)। ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুই দফায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনিরুল। এবার টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট ভোট।
এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। ভোট দিয়েছেন ৯৪ হাজার ১১৫ জন। ভোটের হার ৩৮ দশমিক ৮২। ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তাহসীন বাহার বলেন, কুমিল্লার মানুষ যে পরিবর্তন চাচ্ছে, উন্নয়ন চাচ্ছে, তারই ফলাফল ভোটে পেয়েছেন। কুমিল্লা নগরীকে পরিকল্পিতভাবে স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবেন তিনি।
কুমিল্লায় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগ্রত মানবিকতা’য় যুক্ততার মধ্য দিয়ে নগরবাসীর সামনে আসেন তাহসীন বাহার। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি কুমিল্লা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন।
মনিরুল হকের কাছ থেকে কুমিল্লার মেয়র পদ হাতছাড়া হয় ২০২২ সালের নির্বাচনে। সে সময় বাহাউদ্দিনঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হকের কাছে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বরে আরফানুলের মৃত্যু হওয়ায় এই সিটিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
নির্বাচনে এই দুজন ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শিবির থেকে আরও দুজন প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। এঁদের মধ্যে নুর-উর রহমান হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৭৩ ভোট। আর ঘোড়া প্রতীকে নিজাম উদ্দিন পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৫৫ ভোট।
তাহসীনের বাবা আ ক ম বাহাউদ্দিন বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভায় ১৯৮৪ ও ১৯৮৯ সালে চেয়ারম্যান ছিলেন। ভোটারদের অন্তত ১০ জন বলেছেন, সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই তাঁর মেয়ে নির্বাচনে এগিয়ে গেছেন। অপর দিকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে এবার সেভাবে ঐক্য দেখা যায়নি।
আপনার বাবা এই এলাকার সংসদ সদস্য, আপনি মেয়র হচ্ছেন, এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব হবে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তাহসীন বলেন, ‘এটা বরং কুমিল্লার জন্য ভালো হবে। কারণ, আমার বাবা এমপি, বারবার কুমিল্লার মানুষের মন জয় করে, মানুষের ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি আমার বাবার পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখন দুজন একসঙ্গে কাজ করলে কুমিল্লার উন্নয়ন এবং কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ অনেক বেশি হবে।’
তাহসীন বাহার সূচনা একজন চিকিৎসক ও সমাজকর্মী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক। স্ব-উদ্যোগে স্ব-অর্থায়নে কোনো ধরনের অনুদান ছাড়াই সংগঠনটি প্রতি বছর মেডিক্যাল ক্যাম্প, ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প, করোনার সময় ২০ হাজারের বেশি অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করেছে। জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সূচনা তার বাবার উদ্যোগে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে কাজগুলো করেন।
তিনি কুমিল্লা মিশনারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ময়নামতি থেকে এমবিবিএস পাশ করে মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি জেলার ১৭টি উপজেলায় জাগ্রত মানবিকতা কাজ করছে নিয়মিত। প্রতিনিয়ত তরুণ-তরুণীরা যুক্ত হচ্ছেন এ প্লাটফর্মে। শহরের আশ্রম, এতিমখানা, মাদ্রাসায় তাদের সহযোগিতা নিয়মিতই যায়। করোনার সময়ে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বাবার ফোন ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের খাবার পাঠিয়েছেন।
লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ হাজারো মানুষের খাদ্য ও পাঁচ হাজার অস্বচ্ছল মানুষের পনেরো দিনের খাবার দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া অক্সিজেন ব্যাংক ও প্লাজমা সহায়তা করেছেন শতাধিক মানুষকে।
নারীর জন্য তারা ফ্রি অ্যাডভোকেসি, তাদের পাশে দাঁড়ানোর আয়োজন আর সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে তাদের সেমিনারের মাধ্যমেও উৎসাহিত করেছেন ডা. সূচনা।
২০২০ সালে কুমিল্লা জেলার সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জাগ্রত মানবিকতা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনাকে জয়িতা সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয়।
তার মানবদরদী কাজের জন্য ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি “সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন” কর্তৃক তাকে বিশেষ সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।
এ ছাড়াও ডা. তাহসীন বাহার সূচনাকে তার কাজের অবদান ও অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ‘টেন আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পার্সনস (টিওওয়াইপি) অ্যাওয়ার্ড-২০২১’, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ‘গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ আয়োজিত ‘গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ পদক দেওয়া হয়।
জাগ্রত মানবিকতা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।