আলোচিতসারাদেশ

আগে কমিশনের ‘টেন পার্সেন্ট’ টাকা বুঝে নেন, তারপরে ফাইলে হাত দেন ইউএনও’!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সরকারি বরাদ্দের দশ শতাংশ কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রূপগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আহসান মাহমুদ রাসেলের বিরুদ্ধে।

তার অপসারণ দাবিতে ঝাড়ু মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় নাগরিক কমিটি।

অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও আহসান মাহমুদ রাসেল ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকে টিআর, জিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপিসহ উপজেলা পরিষদের সরকারি বরাদ্দে নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকাশ্য ঘুষ বাণিজ্য করে আসছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলেও অনিয়ম ঢাকতে সরকারি দপ্তরের কোনো তথ্য দেন না তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তিনি সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ১০টার মিটিংয়ে আসেন ১২টায়। কোনো অনুষ্ঠানে তাকে সভাপতি কিংবা প্রধান অতিথি করা না হলে ওই অনুষ্ঠানে যান না।

ইউএনওর এলাকার বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার গোয়ালপাড়া এলাকা সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা বিশ্বাস আব্দুস সাত্তার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের তেমন কিছুই ছিল না। বর্তমানে তার বাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ নির্মাণাধীন। কিনেছেন কয়েক বিঘা জমি। রূপগঞ্জের গোয়ালপাড়া এলাকায় জমি কেনার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। আহসান মাহমুদ রাসেলের আগে ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ছিলেন। এরপর ফরিদপুরের সদরপুরের ইউএনও ছিলেন।

ফরিদপুরের সদরপুরের একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি সদরপুরে থাকাকালীন আকোটের চর ইউনিয়নের কৃষ্ণমঙ্গলের ডাঙ্গী (বটতলা) আহমাদ মাহমুদ রাসেল বাংলা শতবর্ষী পুকুর ভরাট ও গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ কাজ বন্ধে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ওই সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ ও নির্মাণ নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ইউএনও টিআর-কাবিখা প্রকল্পের অর্থ ছাড় করছেন না; প্রকল্পের নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না; আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব দেন না; ইচ্ছামতো ব্যয় করেন; পরিষদের মাসিক সভায় জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য যথাযথভাবে লেখা হয় না; ইউনএনও নিজের মতো রেজুলেশন তৈরি করেন; ভাষা দিবস উদ্‌যাপনে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিজের মতো খরচ করেছেন; জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করেন।

উপজেলায় সেবা নিতে আসা লোকজন বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইউএনওর নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন টক অব দ্য রূপগঞ্জে পরিণত হয়েছে। ইউএনওর এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত খোদ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলও। ইউএনওর এসব দুর্নীতি, অনিয়মের তদন্ত ও আয়ের উৎস খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছে এলাকাবাসী।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র আরও জানায়, ইউএনও মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে ইটভাটার মালিকদের থেকে ইট ও টাকা আদায়, বিভিন্ন দিবসের নামে টাকা আদায় ও খরচের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের বিপরীতে টেন পার্সেন্ট করে কমিশন বা ঘুষ না দেওয়া হলে তিনি কোনো ফাইলই স্বাক্ষর করেন না। আগে কমিশনের টাকা বুঝে নিয়ে তারপরে ফাইলে হাত দেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত দপ্তর হচ্ছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দপ্তর।

অভিযোগের ব্যাপারে ইউএনও আহসান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই বিধি মোতাবেক সেবা দিয়ে আসছি। ভুলতা ফ্লাইওভার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা ও হকার উচ্ছেদ করেছি। পাশাপাশি সম্প্রতি চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধে নকলে জড়িত থাকায় কিছু শিক্ষকের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো বরাদ্দ থেকে কোনো পার্সেন্টিজের সঙ্গে আমি জড়িত নই। মূলত একটি পক্ষ আমাকে হেয় করতে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।’ ডুপ্লেক্স বাড়ির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

রূপগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমি কিছু শুনিনি। আর এ ব্যাপারে কিছু বলতেও চাই না।’

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ইউএনও’র বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ করেছে আমার কাছে।’

 

সূত্র: দৈনিক বাংলা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button