গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বেইলি রোডের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্তব্ধ করে দিয়েছে অনেকগুলো পরিবারকে। বৃহস্পতিবার রাতের এই দুর্ঘটনায় অনেকে পরিবারের একাধিক সদস্যকে হারিয়েছেন।
একটি পরিবারের সবাই মারা গেছেন, আছে এমন খবরও। একের পর এক মর্মান্তিক সংবাদে ওই রাতটি বিভীষিকা হয়ে থাকবে অনেকের কাছেই।
স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার ছিল সৈয়দ মোবারক হোসেনের। মার্চের ২২ তারিখে সবাইকে নিয়ে ইতালিতে পাড়ি জমানোর কথা ছিল তার।
তবে, সপ্তাহ তিনেক আগেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাড়ি জমালেন মৃত্যুর পথে।
ঢাকার বেইলি রোডের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারান তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় পারিবারিক কবরস্থানটিই একসঙ্গে পরিবারের সবার শেষ ঠিকানা হয়ে উঠলো।
নিহতরা হলো, সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম, দুই মেয়ে সৈয়দা নূর, সৈয়দা কাশফিয়া ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ।
সৈয়দ মোবারক হোসেনের চাচাতো ভাই সৈয়দ রিয়াদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তার সত্তরোর্ধ্ব মা আগে থেকেই অসুস্থ। ছেলে, নাতি-নাতনিদের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।”
বৃহস্পতিবার রাতের ওই অগ্নিকাণ্ড এমন অজস্র শোকগাঁথা লিখে গেছে।
শুক্রবার বিকেলে নিহতদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকার পাড়ার সৈয়দ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। একই সারিতে পাশাপাশি তাদের দাফন করা হয়েছে।
মৃত্যুর আগে অসহায় মানুষগুলোর আকুতির কথা আর স্বজনদের আর্তনাদ উঠে আসছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর শিরোনামে।
গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট ছিল। ফলে, পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই দল বেঁধে যেতেন সেখানে।
যেমন গিয়েছিলেন, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক লুৎফুন নাহার করিম এবং তার মেয়ে জান্নাতিন তাজরী। তাদের আনন্দের ক্ষণটুকু উদযাপনের এই চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিষাদে পরিণত হয় পরিবারের জন্য।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ওই রাতেই স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহে শনাক্ত করেন এম. এ. এইচ গোলাম মহিউদ্দিন।
লুৎফুন নাহার করিমের মতোই মেয়ে ভিয়াংকাকে নিয়ে ওই ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন রুবি রায়। আগুন তাদেরও প্রাণ কেড়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানিয়েছিলেন, “আমাদের একজন সহকর্মীর কন্যা মারা গেছেন।”
পরে জানা যায়, পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক নাসিরুল ইসলামের মেয়ে লামিসা ইসলাম ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। লামিসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়তেন।
দু’জন গণমাধ্যমকর্মীও মারা গেছেন এ ঘটনায়।
তাদের একজন তুষার হাওলাদার। অপরজন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী।