গাজীপুরশিক্ষা

সহকর্মীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিবুলের বিরুদ্ধ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সনদ) হিসেবে চলতি মাসে যোগ দেন লামিয়া আক্তার (ছদ্মনাম)। এরপর তাকে যৌন নিপীড়ন করা শুরু করেন ডেপুটি ডিরেক্টর মুজিবুল হক। যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিনেই পরিচয়পর্বের ছলে তার মোবাইল নম্বর নেন ওই কর্মকর্তা। এরপর শুরু হয় এসএমএস দেওয়া। তৃতীয় দিন তার কাছে গিয়ে গায়ে-পিঠে হাত দেন তিনি। লামিয়ার এসব পছন্দ নয় জানালে আরেক নারী সহকর্মী তাকে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে বলেন। তবে লামিয়া এসবে অভ্যস্ত না বললেও তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। চলতে থাকে যৌন নিপীড়ন। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। এরকম একাধিক অভিযোগ রয়েছে বাউবির এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রভাবশালী হওয়ায় নারী নিপীড়নের মতো একের পর এক অপকর্ম করেই যাচ্ছেন তিনি।

২৮ জানুয়ারি কালবেলা- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সহকর্মীদের যৌন নিপীড়ন করেন বাউবির মুজিবুল’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুজিবুল হক গাজীপুরের স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেও সাহস পান না। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে হয় বদলি করে দেওয়া হয়; না হলে চালানো হয় মানসিক নির্যাতন। অভিযোগের পরে বিষয়টি তদন্তে কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ৪ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

২৫ জানুয়ারি দেওয়া অভিযোগে ওই ভুক্তভোগী নারী উল্লেখ করেন, ‘চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পরীক্ষা বিভাগে যোগ দেন। ওই নারী বলেন, পরদিন ১৬ তারিখ কন্ট্রোলারের আদেশে সনদ শাখায় কাজে যোগ দেই আমি। ওইদিন আমি সবার সঙ্গে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া করি। পরদিন থেকে সনদ শাখার মুজিবুল হক আমাকে এসএমএস দেওয়া শুরু করেন। এরপর যখন রুমের বাইরে যেতেন বা আসতেন, তখন গায়ে-পিঠে হাত দিতেন। তাতে বাধা দিই। তবে অফিসের সবাই আমাকে বোঝান এটাই স্বাভাবিক। আমি এগুলো সহ্য করেই ১৮ তারিখ পর্যন্ত অফিস করি। সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসে আসি। তখন দেখি ওই কর্মকর্তা ছাড়া অফিসে কেউ আসেননি। তখন আমি একটু ভয় পাই। তাই তাকে সালাম দিয়ে সকালের নাস্তার কথা বলে নিচে ক্যান্টিনে চলে আসি। ভাবলাম, অফিসের অন্য নারী সহকর্মীরা এলে রুমে যাব। তখন তিনি আমাকে এসএমএস করতে শুরু করেন। পরে বিষয়টি শাখার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানালে তারা আমাকে এসএসসি প্রোগ্রামে (ভবনের দ্বিতীয় তলায়) শিফট করে দেন। যেটা আমি জানতাম না। ফলে আমি সনদ বিভাগে কাজে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুজিবুল ও ওই নারী সহকর্মী আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় বকাঝকা শুরু করেন।’

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কুমিল্লায় বদলির হুমকি দেন। এ সময় তারা আমাকে দুই ঘণ্টা (দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা) র্যাগ দেন। তারা আমাকে সাদা তিন পাতায় নিজের নামে স্বাক্ষর করান। একই সঙ্গে ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি করেন। তারা বিভিন্ন হুমকি দেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুজিবুল হক। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এসব মিথ্যা কথা। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা গভীর ষড়যন্ত্র। আমার চাকরির বয়স ২৬ বছর। ওইদিন তাদের একটি গ্রুপ আমাকে মারতে আসে, আমি কিছুই জানি না। আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। তারা বলছে, বিষয়টি দেখবে। আমি স্থানীয় লোক, আমার বিরুদ্ধে কখনো এ ধরনের অভিযোগ নেই। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।

বাউবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রেজা নূর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি জানি না। তবে আমার কাছে আমার এক নারী সহকর্মী মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি ওখানে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। পরে আমি তাকে বদলি করে অন্য সেকশনে দিয়ে দিছি। এর বেশি আমি আর কিছু জানি না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপাচার্য হুমায়ুন আক্তারকে গত দুদিনে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button