গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : এবার হজের অর্ধেক কোটাও পূরণ হয়নি। দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও কোটা পূরণ হবার আগেই বৃহস্পতিবার হজ নিবন্ধন শেষ করা হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “শেষ পর্যন্ত এবার হজে যাওয়ার জন্য ৫৩ হাজারের কিছু বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। আমরা আর সময় বাড়াবো না।”
তিন জানান, ” গতবারের চেয়ে হজ খরচ এবার এক লাখ টাকার মতো কমানো হলেও আগের মতো সাড়া পাওয়া যায়নি।”
গত ১৫ নভেম্বর নিবন্ধন শুরুর পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৩ হাজার ১১৫ জন নিবন্ধন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজ করার অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রণালয়। হজ চুক্তি অনুযায়ী এখনো কোটা ফাঁকা রয়েছে ৭৪ হাজার ৮৩টি। ফলে মোট কোটার ৫৮ শতাংশ খালি রেখেই হজ নিবন্ধন শেষ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
১৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল প্রথম দফা হজ নিবন্ধনের সময়। পরে সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। হজযাত্রীদের সাড়া না পাওয়ায় সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি করা হয়।
মোট ৫৩ হাজার ১১৫ জন হজযাত্রীর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৮০২ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৯ হাজার ৩১৩ জন নিবন্ধন করেছেন। কোটার ৪২ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার দুটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং আট লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এ বছর সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য এক লাখ ৪ হাজার ১৬০ টাকা কমানো হয়েছে।
গতবারও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নিবন্ধন কম ছিল। কিন্তু এবার গতবারের চেয়ে সাড়া আরো অনেক কম।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এস শাহাদাত হোসাইন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এ বছর হজ খরচ গত বারের তুলনায় এক লাখ টাকার মতো কমলেও করোনার আগের তুলনায় অরনেক বেশি। আর তার বিপরীতে ওমরাহ খরচ অনেক কম। সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার মধ্যে একজন ওমরাহ করতে পারেন। ফলে খরচ বাঁচাতে অনেকেই এখন ওমরাহর দিকে ঝুঁকছেন।”
“এছাড়া সৌদি আরব হজ নীতিতে অনেক পরিবর্তন আনায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে তারা তাদের ব্যবস্থাপনায়ই মুসলিম দেশ থেকে হজ যাত্রী নেবে। পুরো ব্যবসাটা তারা করতে চায়। অমুসলিম দেশ থেকে তারা এখন অনলাইনে সরাসরি হজ যাত্রী নিচ্ছে। ওমরাহ অনলাইনে করে ফেলেছে। হজও হয়তো পুরোটা অনলাইনে হয়ে যাবে। তখন কোটা থাকলেও হজ এজেন্সির প্রয়োজন থাকবে বলে মনে হয় না,” জানান হাব সভাপতি।
বাংলাদেশে হজ এজন্সি আছে এক হাজার ২৫০টি। এর বাইরে ট্র্যাভেল এজেন্টরাও হজযাত্রীদের নিয়ে কাজ করেন। তাদের হজযাত্রী কমে গেলেও ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য খরচ একই আছে। টিকিট বিক্রিও নির্ধারিত তিনটি এয়ার লাইন্সের অনেক কমে যাবে। ফলে হজ ও ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। কোনো কোনো এজেন্সি হজকেন্দ্রিক ব্যবসা এরই মধ্যে গুটিয়ে নিয়েছে।
অ্যাসোসিয়েন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ সংবাদ মাধ্যমকে জানান,‘ ‘ ২০১৮-১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করলে হজের খরচ ৮০ ভাগ বেড়েছে। এটা সব দেশেই। এর সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ায় আরো খরচ বেড়েছে। একজনের হজের খরচ দিয়ে ছয়জন ওমরাহ করতে পারেন। ফলে ওমরাহর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এখন বছরে পাঁচ লাখ মুসলমান ওমরাহ করতে যান।”
তিনি বলেন, “আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণে আমরা ট্র্যাভেল এজেন্টরাও ক্ষতির মুখে পড়ছি। টিকিট বিক্রি অর্ধেকের নীচে নেমে গেছে।”
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “সৌদি আরবে এখন বাসাভাড়া বেড়ে গেছে, ১৭ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়েছে। সেখানে অনেক বাড়ি ভেঙে ফেলায় বাড়ি ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। সব খরচই বেড়েছে। তারপরও আমরা এক লাখ টাকা গত বছরের তুলনায় কমিয়েছি। আর কমানো সম্ভব নয়।”
তার কথা, “এটা ব্যক্তিগত ইবাদত। তারাপরও আমরা নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছি। কিন্তু না গেলে তো কিছু করার নেই। তবে ওমরাহর খরচ কম হওয়ার অনকেই ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। ওমরাহ যাত্রী দিন দিন বাড়ছে।”
সূত্র: ডয়চে ভেলে