রাজনীতি

পোস্টারে এরশাদ, প্রচারে ফারুক

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গুলশান ২-এর কূটনৈতিক পাড়ার ঝকঝকে মসৃণ পিচঢালা পথ ছাড়িয়ে কালাচাঁদপুর এলাকায় যেতেই সড়কগুলো বেশ সরু হয়ে গেছে। এমনই বর্ধিত বারিধারা এলাকার সড়কটির এক পাশে গোটা দশেক পোস্টার টানানো রয়েছে। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে হাস্যোজ্জ্বল মুখ—প্রার্থী এইচ এম এরশাদ। পোস্টারগুলো সাদাকালো হলেও খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন অনেক পথচারী। আসা-যাওয়ার পথে অনেকে আবার কিছু সময় দাঁড়িয়েও থাকেন। এক পথচারী পোস্টার দেখে বললেন, ‘ভাই, এরশাদ কি এখান থেকে ভোট করবেন? ওনার বাড়ি না রংপুর। এখানে কেন?’

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এরশাদ ঢাকা-১৭ আসনে জিতেছিলেন—এ কথা জানানোর পর আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ওই যুবক বলেন, ‘ওনারে কালাচাঁদপুরে কখনো আসতে দেখি নাই। গুলশানে থাকেন। এবার আমাদের এলাকায় যে আইব, তারে ভোট দিমু।’

এভাবেই সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর মূল্যায়ন করলেন এই ভোটার। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ছাড়াও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন আরও কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আন্দালিভ রহমান পার্থ, সিংহ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী (তৃণমূল বিএনপি) সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ নাজমুল হুদা এবং বর্তমান সাংসদ বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ। তাঁদের সঙ্গে আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, যিনি চিত্রনায়ক ফারুক হিসেবেই বেশি পরিচিত। চিত্রনায়ক হিসেবে খ্যাতি পেলেও ফারুকের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। তবে তাঁর চার প্রতিদ্বন্দ্বী সবারই এর আগে সংসদে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তবে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা অন্য সবার আগেই শুরু করে দিয়েছেন ফারুক। ১১ ডিসেম্বর গুলশান-২-এর ওয়ান্ডারল্যান্ডে বিশাল মাঠে ‘ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া…’ গানটি বাজিয়ে তিনি প্রচারাভিযানে নামেন। জনপ্রিয় গানটি ফারুক অভিনীত বিখ্যাত ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রের। নিজের প্রচারে তারকাখ্যাতিকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।

প্রচারের শুরুর দিন ফারুক বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আমি অন্য একটি আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নেত্রী বলেছেন তুমি ঢাকা-১৭ আসনে যাও। নেত্রীর নির্দেশে আমি আপনাদের এখানে এসেছি। এই এলাকার বড় একটি অংশ অবহেলিত। এখানকার অবহেলিত মানুষের দুঃখ ঘোচাতে দেওয়ার জন্য তোমাকে সেখানে যেতে হবে।’

প্রচারের শুরুতেই সরব হলেও প্রায় সোয়া তিন লাখ ভোটারের আসন ঢাকা-১৭-তে ফারুকের প্রতিপক্ষরা নীরবই রয়েছেন। এই আসনের সাবেক সাংসদ এইচ এম এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। প্রচারাভিযানে তিনি নামবেন কি না, তাও ভোটারদের কাছে অজানা। কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর, গুলশান-২ নম্বর চত্বরে কিছু পোস্টার টানিয়ে দিয়েই ভোটের লড়াইয়ে থাকার বার্তা দিয়ে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

এলাকার ভোটার, এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মতে, মূল লড়াই হবে নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের। বিএনপির ধানের শীষ পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিভ রহমান পার্থ। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেলেও প্রচারে নামেননি তিনি। প্রচার শুরু করবেন আরও কয়েক দিন পর। কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক নেতা হয়রানির অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সোমবার পার্থ এলাকায় একটি ঘরোয়া বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে দলের কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে ধরেছে পুলিশ। তাই প্রচার শুরুর দিনক্ষণ আগাম বলা হচ্ছে না।

মঙ্গলবার আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, ‘আমরা এখন ডকুমেন্টেশনের কাজ করছি। ভোটার লিস্ট দেখে কাগজপত্র তৈরির কাজ চলছে।’

সোমবার সিংহ প্রতীক পেয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা বলেছিলেন, ‘সিংহ যেমন বনের রাজা, আমিও গুলশানের রাজা হতে চাই। আমি এ নির্বাচনে জিতব।’

জয়ের আশা করলেও নাজমুল হুদাকে প্রচারে নামতে দেখেনি গুলশানবাসী। এখানকার অভিজাত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত মুখ হলেও মধ্যবিত্ত বা স্বল্প আয়ের লোকদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত তিনি।

সব প্রার্থীকে নিয়ে এসব হিসাব-নিকাশই কষছেন ঢাকা-১৭ আসনের ভোটাররা। গুলশান-২-এর বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ফারুক নায়ক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সংসদে আমরা পার্থকে দেখেছি। তাঁর বক্তব্য শুনেছি। বয়সে তরুণ। তরুণদের ভোটের বড় অংশ তিনি বেশ ভালোই পাবেন বলে মনে হচ্ছে।’

তবে শাহজাদপুরের মতো অনুন্নত এলাকার ভোটারদের ভাবনা অনেকটাই বিপরীত। আতিকুল ইসলাম নামের এই এলাকার এক ভোটার বলেন, ‘উচ্চবিত্তরা গুলশানের অভিজাত এলাকার বড় অংশ নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ভোটার সংখ্যা বেশ কম। মাত্র ২০ শতাংশ হতে পারে। তাঁরা পার্থ, নাজমুল হুদা কিংবা এরশাদকে চেনেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত কিংবা ভাষানটেক, নদ্দার ভোটাররা ফারুকের গান শুনে থাকে। বাংলা ছবির নায়ক ফারুকই তাদের কাছে পরিচিত মুখ। আমরা তো এরশাদ, বিএনএফের আবুল কালাম আজাদের মতো সাংসদদের কাছে আসতে দেখিনি।’

 

সূত্র: প্রথম আলো

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button