বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ফ্রান্স: প্রধানমন্ত্রী
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশের উন্নয়নে ফ্রান্স সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ফ্রান্স আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আমাদের নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে। যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্স। বাংলাদেশের উন্নয়নে দেশটি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে। এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও সহযোগিতা করবে ফ্রান্স।
বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের কর্মকাণ্ডে ফ্রান্স সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন এবং সুশাসন এ নতুন সম্পর্কের মূলভিত্তি। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিমূলক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার পাঁচ দশকের অধিক সময় চলমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, আজ তা একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় ফ্রান্স সরকারের আস্থার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং সেই প্রেক্ষিতে আমরা কিছু সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের অগ্রণী ভূমিকাকে আমরা স্বাগত জানাই। এ লক্ষ্যে ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে একটি টেকসই তহবিল গঠনে ফ্রান্সের আহ্বানকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি।
বৈঠকে অংশ নিতে সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে ম্যাক্রোঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। এর ১০ মিনিট পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষ বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ঋণ সহায়তা চুক্তি সই হয়।
এর আগে সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
সকালে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে গেলে সেখানে ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানান জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও তার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাদুঘর পরিদর্শন করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। শেষ পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসেন ম্যাক্রোঁ। সেখান থেকে গতরাতে ঢাকায় আসেন। ৩৩ বছর পরে ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিপাক্ষিক সফরে ঢাকায় এলেন তিনি।
রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধানমন্ত্রীর আয়োজন করা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে অংশ নেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। পরে ‘জলের গান’ ব্যান্ডের শিল্পী রাহুল আনন্দের স্টুডিও পরিদর্শন করেন ম্যাক্রোঁ।
দুই দিনের সফর শেষে আজই ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর।