কালীগঞ্জের সাবেক এমপি পুত্র হত্যা মামলার বাদিকে মোবাইলে হুমকি
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য মোখলেসুর রহমান জিতুর ছেলে হাবিবুর রহমান ফয়সাল (২৬) হত্যা মামলার বাদি ও নিহতের বড় বোন মাসুমা সুলতানা মুক্তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে।
রোববার রাত ৯টা ১৯ মিনিটে গ্রামীনফোনের একটি নাম্বার থেকে ২মিনিট ৩০ সেকেন্টের অধিক ওই ফোন কলে মামলার বাদীকে আওয়ামীলীগের কর্মী পরিচয়ে হুমকি দেয়া হয়।
হুমকির বিষয়টির নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার পঙ্গজ দত্ত জানান, মামলার বাদি মাসুমা সুলতানা মুক্তাকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে হুমকি দিয়েছে বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন। রেগুলার থানায় আসার কারণে হুমকিদাতা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে ফোনে বাদীকে জানায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাদী থানায় সাধারণ ডায়েরী করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। মামলার তদন্ত খুব দ্রুতগতিতে চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত ৩০ জুলাই রাত ১০টার দিকে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামের একটি মুদি দোকানে ফয়সাল, রিমন, নওশাদসহ কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে ফয়সালকে গুলি করে পালিয়ে যায় রিমন । পরে স্থানীয়রা গুলির শব্দ শোনে এগিয়ে দেখে ফয়সালের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। ঘটনার দিন রাতেই মামলার ২নং আসামী ও কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামের হানিফার ছেলে নওশাদকে আটক করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান জানান, ঘটনার পর রিমনকে প্রধান করে ৬ জনের নামে ও অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে নিহত ফয়সালের বড় বোন মাসুমা সুলতানা মুক্তা বাদি হয়ে ১ আগষ্ট কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা (নং ১) দায়ের করেন।
ঘটনার পর রিমন প্রথমে নরসিংদীর পলাশ এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে এবং পরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকায় আত্মগোপন করে। সর্বশেষ সে কালীগঞ্জের উত্তরগাঁও বাজারে আলমগীরের দোকানে অবস্থান করাকালে সেখান থেকে র্যা ব মামলার প্রধান আসামী মো. তৌহিদুল ইসলাম রিমনকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্যমতে একই এলাকার আলমগীরের দোকানে অভিযান চালিয়ে ফয়সাল হত্যায় ব্যবহৃত ১ টি ম্যাগজিনসহ পিস্তল, ২ রাউন্ড তাজা গুলি, ২ টি দেশীয় রামদা ও দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
ওই সময় আসামী রিমন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। রিমন এবং একই এলাকার মো. হুমায়ুন দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিল।
মামলার অপর আসামীরা হলো- আহসান উদ্দিনের ছেলে মো. হুমায়ুন (২৮) ও মুঞ্জুর হোসেন (৩৫), খঞ্জনা গ্রামের আব্দুর রহমান শেখের ছেলে আব্দুস সাত্তার শেখ (২৫) ও প্রধান আসামী রিমনের বাবা সাইদুল ইসলাম উরফে মোসলে উদ্দিন মাস্টার (৬২)।
হুমায়ুনের ভাতিজির সাথে নিহত হাবিবুর রহমান ফয়সালের সখ্যতাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে সংবাদ সম্মেলেনের মাধ্যমে জানিয়েছিল র্যা ব।
ঘটনার পর মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ একেএম ফজলুল হক মিলনসহ স্থানীয়রা ফয়সাল হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত ফয়সার নম্রভদ্র এবং এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। আর অন্যদিকে রিমন এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসী ছিল। তার যন্ত্রনায় এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই আতঙ্কে থাকে। তার বিরুদ্ধে থানায় মারামারি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় সাজা ভোগ করে জামিনে এসে পূনরায় আগের রূপে ফিরে গেছে রিমন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানায়, রিমনের অত্যাচারে ভাদগাতী, চৌড়া, বড়নগর, চান্দাইয়া, মোসানীসহ কয়েক গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ থাকতো। এলাকায় সে কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতার ছত্রছায়ায় ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিল।
এ ছাড়াও তারা আরো জানায়, ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না প্রভাবশালীদের ভয়ে।
হত্যা মামলার বাদি নিহত ফয়সালের বড় বোন মাসুমা সুলতানা মুক্তা জানান, রোববার রাত ৯টা ১৯ মিনিটে আমার মোবাইলে গ্রামীনফোনের একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন করে আমকে হুমকি দেয়। হুমকির বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদশীক (এসআই) মুজিবুর রহমান, কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলম চাঁদ এবং কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার পঙ্গজ দত্তকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছে।
কে বা কারা আমাকে এ হুমকি দিয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ যারা এ হত্যাকাণ্ডে পিছনে জড়িত তারাই এ হুমকি দিয়েছে বলে আমি ধারণা করছি।
উল্লেখ্য, প্রয়াত মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়া ১৯৭৩ সালে কালীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে তার বিপুল জনপ্রিয়তায় ১৯৭৯ সালে গাজীপুর ৫ সংসদীয় কালীগঞ্জ আসনে (সাবেক ৩ আসন) বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বার ১৯৮৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং সেবারও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।