আলোচিতসারাদেশ

ফুলে-ফেঁপে উঠেছে উত্তরের নদ-নদী, বন্যার আশঙ্কা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : চট্টগ্রামের পর এবার উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সবগুলো নদ-নদীর পানি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ। ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ার কারণেপরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অবস্থা অবহ্যত থাকলে দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি কি স্বাভাবিক ঘটনা নাকি অন্য কোন কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের বর্ষা মৌসুম। এই সময় বাংলাদেশে স্বাভাবিক বন্যা হয়। আমাদের বৃষ্টির ৭০ শতাংশই এই সময় হয়। শুধু আমাদের নয়, উজানে থাকা ভারতের একটা অংশেও এই সময়ে ভারী বৃষ্টি হয়। ফলে এই সময় আমাদের এখানে বন্যার বিষয়টি নির্ভর করে ওদের ওখানে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তার উপর। আমাদের তিস্তায় কিন্তু দ্রুত পানি চলে আসে, আবার দ্রুত কমে যায়। এখন ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার উপর আছে। এর প্রধান কারণ জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২ ভাগ বৃষ্টি কম হয়েছে। ওই সময় চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এক মাসের বৃষ্টি ৫-৬ দিনে হয়ে গেছে। প্রতি বছরই এখানে বর্ষায় যে পানি আসে সেখানে কিছু না কিছু বন্যা হয়। এই মুহূর্তে বড় বন্যার আশঙ্কা কম। তবে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় আছে। ১৯৯৮ বা ১৯৮৮ সালেও কিন্তু সেপ্টেম্বরে বন্যা হয়েছে। ফলে আমাদের প্রস্তুতি রাখতেই হবে। যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।”

শনিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পানিতে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের আমন ক্ষেত ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকায় রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে লালমনিরহাটের ১৫টি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হতে পারে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ৪০টি চরাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ধানসহ শষ্য ক্ষেতগুলো তলিয়ে আছে পানিতে। পানিবন্দি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে ও পাউবো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকাগুলো হচ্ছে- গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম। কাউনিয়া উপজেলার ধুসমারার চর, আজম খাঁ চর, হাইবত খাঁ গোনাই, পল্লীমারী, চর একতা, চর মিলনবাজার, গোপীকাল্লা, ডালার চর ও চর গোদাই। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে কারণে দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সর্দার উদয় রায়হান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে। সেখানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তবে ৪৮ ঘণ্টার পর পানি কমতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। যমুনা নদীর পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি। এখানেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দুইদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে গুরুতর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র নদীর পানিও একই অবস্থা। ব্রহ্মপুত্রের পানিও দুই দিন বাড়তে পারে।”

এই পানি বৃদ্ধি কী স্বাভাবিক ঘটনা? জানতে চাইলে জনাব রায়হান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “মৌসুমী বায়ুর কারণে বৃষ্টি বেড়েছে। কয়েকদিনে ওই এলাকায় মৌসুমী বায়ু সক্রিয় ছিল। সেখানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই পানিই নদীতে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গর দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি বা সিকিমে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজ আছে। তবে ভারত কখন সেটা খোলে, আর কখন বন্ধ করে সেটা আমাদের জানায় না। ফলে অফিসিয়ালি আমরা এটা জানতে পারি না। শুধুমাত্র তাদের কাছ থেকে নদ-নদীর পানি বাড়া বা কমার তথ্য পেয়ে থাকি। মূলত ভারী বৃষ্টির কারণেই নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকা তথ্য।”

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ার কারণে দ্রুত পানি বাড়ছে। এদিকে যমুনাসহ ওই অঞ্চলের সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের অসহায় মানুষ। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানিয়েছেন, “পানি বাড়ার সাথে সাথে কিছু নিচু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নদী পাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।”

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি পানি কমার ফলে যমুনা অভ্যন্তরে চরাঞ্চল পানি নেমে যেতে শুরু করেছিলো। ফলে বন্যা প্লাবিত মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিলো। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ভারী বর্ষণের কারণে নতুন করে পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়াতে যমুনা পাড়ের মানুষ গুলোকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণ হলেও যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু চলমান ভারি বর্ষনে যমুনার পানি বৃদ্ধি ও চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো

নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। সাথে সাথে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদী পাড় এবং চরাঞ্চলের বহু মানুষ।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button