বিজ্ঞানীদের শঙ্কা ২০২৪ সালে নানা ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি হবে বিশ্ব
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। উষ্ণতা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সামুদ্রিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বরফস্তর যেভাবে গলতে শুরু করেছে তা “নজিরবিহীন” বলে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, যেভাবে তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার রেকর্ড ভেঙে চলেছে তা শঙ্কাজনক।
জাতিসংঘ বলছে, ইউরোপজুড়ে যে দাবদাহ চলছে তা আরও রেকর্ড ভাঙবে। আবহাওয়া ও মহাসাগরের আচরণ দিনদিন জটিল আকার ধারণ করছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টমাস স্মিথ বলেছেন, “আমার এমন কোনো সময়ের কথা জানা নেই যখন আবহাওয়া মণ্ডলের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বত্র এ ধরনের রেকর্ড ভাঙা এবং অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে।”
লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. পল সেপ্পির মতে, “পৃথিবী এখন লাগামহীন পরিবর্তনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে; যার পেছনে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও ২০১৮ সাল থেকে ‘এল নিনো’র প্রভাবে পৃথিবীর গরম হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া।”
এ যাবৎকালের সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ড
এ বছর জুলাই মাস হতে চলেছে এ যাবৎ পৃথিবীতে সবচেয়ে গরম মাস। মাসটির শুরুতে সবচেয়ে উষ্ণতম দিনের রেকর্ড করা হয়। ২০১৬ সালে বিশ্বে গড় সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার যে রেকর্ড ছিল এবারের তাপমাত্রা তা ছাড়িয়ে গেছে। এবার প্রথমবারের মত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৭ সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা “কোপার্নিকাস”র দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ৬ জুলাই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭.০৮ সেলসিয়াস।
লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ফ্রেডেরিকো অটোর মতে, “গিনহাউস গ্যাস থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকানো না গেলে এমনটা ঘটেই চলবে। এর জন্য মানুষই দায়ী। আমি যে কারণে বিস্মিত সেটা হল জুন মাসে যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড ভাঙছে। বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এত তাড়াতাড়ি এমনটা ঘটার কথা নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এল নিনোর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু সেটার প্রভাব এত তাড়াতাড়ি দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক।”
সবচেয়ে গরম মাস
এ বছর জুন মাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ১.৪৭ সেলসিয়াস বেশি। এই বৃদ্ধি হিসাব করা হয় পৃথিবীতে শিল্পোন্নয়ন ঘটার আগের সময়কার সঙ্গে তুলনা করে। ১৮০০ সাল নাগাদ বিশ্বে শিল্পবিপ্লব ঘটার পর থেকে মানুষ আবহাওয়া মণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করছে অনেক বেশি।
যে অবস্থা চলছে আগামী দশ বছরে ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ টমাস স্মিথ। তিনি বলেন, “পৃথিবীআগামী দশ বছরের মধ্যে যথেষ্ট ঠাণ্ডা হবে বলে মনে হয় না।”
সামুদ্রিক উষ্ণপ্রবাহ
বিশ্বব্যাপী মহাসাগরের তাপমাত্রা মে, জুন এবং জুলাই মাসে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালে সমুদ্র পৃষ্ঠের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রার যে রেকর্ড ২০১৬ করা হয়েছিল শিগগিরই তা ছাড়িয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের তাপমাত্রা যে অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়ছে তাতে বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে শঙ্কিত।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েলা শ্মিডের ভাষ্য, “আটলান্টিকের এই অংশে যে সামুদ্রিক উষ্ণপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে তা আগে কখনো দেখা যায়নি। এটা ধারণার বাইরে চলে গেছে।”
“আর্য়াল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলের তাপমাত্রা জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওপরে ছিল। যা ‘চরম অবস্থা’ অতিক্রম করেছে। পৃথিবী গরম হয়ে উঠেছে এটা পরিষ্কার; মহাসাগরগুলো আবহাওয়া মণ্ডল থেকে অতিরিক্ত উষ্ণতা শুষে নিচ্ছে।”
বরফের স্তর রেকর্ড কমেছে
দক্ষিণ মেরু সাগরে বরফের স্তর জুলাই মাসে রেকর্ড পরিমাণ কম ছিল। যুক্তরাজ্যের আয়তনের দশগুণ পরিমাণ আয়তনের বরফের স্তর গলে গেছে। ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সেখানে যে পরিমাণ বরফের আস্তরণ ছিল- তা রেকর্ড মাত্রায় কমেছে।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের ড. ক্যারোলাইন হোমস বলেন, “এটা শুধু রেকর্ড ভাঙার কারণে উদ্বেগ নয়, যে মাত্রায় রেকর্ড ভাঙছে তা তাদের ভাবাচ্ছে। জুলাই মাসে যে পরিমাণ বরফ গলেছে তা আগে কখনো দেখিনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, “আগামীতে আবহাওয়া মণ্ডলের আরও রেকর্ড ভাঙা অঘটনের আশঙ্কা তৈরি করছে। ২০২৪ সালে নানা ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি হবে বিশ্ব।”
জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ফ্রেডেরিকো অটো বলেন, “তবে এর মানে এই নয় যে ‘জলবায়ু ধ্বংস’ হয়ে গেছে। নতুন পরিস্থিতির আলোকে মানুষের বেঁচে থাকার উপযোগী করে পৃথিবীকে গড়ে তোলার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।”
সূত্র : বিবিসি