আইন-আদালতআলোচিত

হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন কক্সবাজার জেলা জজ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া না মেনে ৯ আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

বুধবার (১৯ জুলাই) বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে জেলা জজের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম সাঈদ আহমেদ রাজা, বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল। অন্যপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট এস এম আমজাদুল হক ও অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ।

ভুল স্বীকার করে জেলা জজ নিজেই আদালতকে বলেন, মামলার চাপ থাকায় অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যখন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অরাজকতা বেড়ে যায়, তখন সব এলোমেলো হয়ে যায়, এই জেলা জজের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

এর আগে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে এক মামলায় ৯ জনকে জামিন দেন এই বিচারক। জামিন আদেশে আসামিদের হাজতবাসের কথা উল্লেখ থাকলেও তারা হাজতে যাননি। হাজতে না গেলেও হাজতবাসের বিবরণ উল্লেখ করে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন- সেই ব্যাখ্যা জানাতে তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

তারও আগে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করে দেওয়া কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম (রিনা)।

আবেদনকারী পক্ষ জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে জমির দখল নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন খোদেস্তা বেগম।

এ মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন আসামিরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেশ আদালত।

গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই দিন এর বিরুদ্ধে আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত সব আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন খোদেস্তা বেগম।

আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আসামিরা ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন আসামিরা। জেলা জজ তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদেশে উল্লেখ করা হয়, হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয়।

অথচ ৯ আসামি হাজতেই ছিলেন না। হাইকোর্টের শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন – সেই ব্যাখ্যা জানাতে তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই মোতাবেক আজ বুধবার হাইকোর্টে হাজির হন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button