সচেতনতায় সাড়া ফেলেছে ‘গাজীপুর-ঢাকা ট্রেন প্যাসেঞ্জার ফোরাম’
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুরের স্টেশনগুলোতে হঠাৎ আটকে যাবে আপনার চোখ। যেখানে প্রায়েই দেখা মেলে ট্রেনের যাত্রীদের সচেতনতায় বুকে ঝুলানো প্ল্যাকার্ড, হাতে প্রচারযন্ত্র ও মুখে বাঁশি নিয়ে কিছু যুবকদের ছুটে চলা। এসব যুবকরা গড়ে তুলেছেন একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। যাদের কাজেই হচ্ছে ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সচেতনতার পাশাপাশি চলাচলকারী ট্রেনের অবস্থান জানানো।
২০১৫ সালে ট্রেনে কাটা পড়ে এক বন্ধুকে হারানোর পর গাজীপুরের তিন বন্ধু মিলে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের সচেতনতা তৈরিতে কাজ শুরু করেছিলেন। যার নাম দিয়েছেন গাজীপুর-ঢাকা ট্রেন প্যাসেঞ্জার ফোরাম।
দীর্ঘদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার চালানোর পাশাপাশি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারা রেসপন্স টিমের মাধ্যমে স্টেশনে স্টেশনে যাত্রীদের সচেতনতার কাজ শুরু করেছেন । সমাজসেবামূলক এই কাজে কয়েক বছরেই তারা চলে এসেছেন আলোর রেখায়, তাদের এই সেবা সাড়া ফেলেছে সবার মধ্যে।

গাজীপুর-ঢাকা ট্রেন প্যাসেঞ্জার ফোরাম গঠন করেছিলেন তিন বন্ধু তামিম, নয়ন ও সালেহীন। এরা সবাই পেশায় আইটি প্রকৌশলী। তাদের বাড়ি গাজীপুরে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন মীর মাহবুব নামে তাদের আরও এক বন্ধু। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ফোরামের গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২৯ হাজার একশ ৪২ জন। অ্যাডমিন ও মডারেটর প্যানেলে আছেন ৩৭ জন। এছাড়াও স্পেশাল রেসপন্স টিমে আছেন ৭২ জন সদস্য। যারা রেল স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণের ব্যাপারে সচেতনতা, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করা, ট্রেনে নারী যাত্রীদের হয়রানি রোধে সচেতনতা, ট্রেনে ঢিল ছোঁড়ার বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও ট্রেন দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে যাত্রীদের সচেতন করা।

এসব কাজের বাহিরেও এই ফোরামের সদস্যরা রেল স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মাদকসেবীদের আড্ডা উচ্ছেদ, ট্রেনে যাত্রীদের কোনো জিনিসপত্র হারানো ও প্রাপ্তিতে সহায়তা দেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চলাচলকারী ট্রেনের অবস্থান জানিয়ে থাকেন প্রতি মুহূর্তে। এজন্য তারা তৈরি করেছেন গাজীপুরের সকল ট্রেনের শিডিউলভিক্তিক অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। এই ফোরাম গাজীপুর রেল স্টেশনে রেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনারোধে নিজস্ব উদ্যোগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত হলুদ সেফটি লাইন তৈরি করেছেন।
গাজীপুর-ঢাকা ট্রেন প্যাসেঞ্জার ফোরামের অন্যতম উদ্যোক্তা তামিম বলেন, আমরা ট্রেনে চলাচল করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। এছাড়াও যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমাদের এই সেচ্ছাসেবী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিষয়ে প্রচার চালিয়ে আসলেও চলতি বছর থেকে আমরা রেসপন্স টিমের মাধ্যমে সরাসরি রেল স্টেশনে যাত্রীদের মধ্যে প্রচারণা শুরু করেছি। প্রথমে বাঁশি ও মাইক নিয়ে আমি ও মীর মাহবুব স্টেশনে প্রচারণা শুরু করলেও এখন অনেকেই আমাদের সহযাত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আমরা কয়েক মাসেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমাদের এই প্রচারণায় গাজীপুরে রেল দুর্ঘটনা অনেক কমে এসেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে দুর্ঘটনা রোধে হলুদ সেফটি লাইন সারাদেশের সব স্টেশনে গড়ে তোলা ও সারাদেশে সকল জায়গায় রেসপন্স টিমের মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে প্রচারণা চালানো।
গাজীপুর-ঢাকা ট্রেন প্যাসেঞ্জার ফোরামের কাজের বিষয়ে গাজীপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার শাহজাহান জানান, রেলওয়ের সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে অনেক সময় যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে এই ফোরামের এগিয়ে আসা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাদের এই সেবামূলক কাজের ফলে এক দিকে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় দুর্ঘটনা অনেক কমেছে। এছাড়াও সাধারণ যাত্রীরাও উপকৃত হচ্ছেন।