রাজনীতি

রাজনীতির মাঠে ‘জামায়াত’ এখন কোন পক্ষে?

গাজীপুর কণ্ঠ, রাজনৈতিক ডেস্ক : রাজনীতির মাঠে নানা কারণে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম। আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের মাঠে দলটির গুরুত্ব বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। যে কারণে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বরাবরই জামায়াত ইস্যুতে কৌশলগত অবস্থানে থাকে। দীর্ঘ এক দশক পর গত ১০ জুন রাজধানীতে বড় সমাবেশের পরই মূলত নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে জামায়াত। কারও মতে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন ভিসা নীতির কারণেই জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অনেকে বলছেন, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাত হয়েছে? এ নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাতকে নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপি দাবি করছে, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ আছে। এ অবস্থায় নতুনভাবে প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের মাঠে জামায়াতে ইসলামী এখন কার?

তবে জামায়াতের দাবি, তারা নিজস্ব আঙ্গিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে। সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাত ভিত্তিহীন। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ৩ জুলাই বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াতের সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধ যেন না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকবে বিএনপির হাইকমান্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে বড় পরিসরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। চলতি জুলাই মাসেই জামায়াত ঢাকা ছাড়া সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে। এরপর আগস্টে কয়েকটি জেলা ও বিভাগ হয়ে ঢাকায় বড় সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে, দলীয় নিবন্ধন ইস্যু আদালতে বিচারধীন থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠ সাজাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। সারা দেশে একশর বেশি আসনে প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত করে প্রচার শুরু করেছে তারা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জোরেশোরে প্রচার চালানো হচ্ছে। সম্ভাব্য নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা নানা রঙের পোস্টার সাঁটিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিন স্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত। সর্বোচ্চ শতাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১২০টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫০ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির শতাধিক আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রস্তুত করা হয়েছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১২০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার লাগিয়েছেন। কৌশলে এসব আসনে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। জামায়াতের প্রার্থীদের পোস্টার নিয়ে একটি নির্বাচনী গান এরই মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ১১৫ জন এমপি প্রার্থীর পোস্টার দেখানো হয়েছে। তার মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৬ প্রার্থীকে ‘এ’ ক্যাটাগরি এবং ১১ জনকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। বাকি শতাধিক প্রার্থী আছেন ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। জামায়াত নেতারা বলেন, তারা এমন অবস্থায় পথ চলতে চান, যেন কেউ বলতে না পারেন জামায়াত বিএনপির ‘বি’ টিম অথবা বিএনপির শত্রু। আবার সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাত আছে—এমন অভিযোগের তীরও যেন কেউ ছুড়তে না পারে। এ ছাড়া প্রশাসনের অনুমতির বাইরে আপাতত কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। অবশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া গানটি সঠিক নয় বলে জামায়াতের দাবি।

নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়টি স্বীকার করে জামায়াতের চারজন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। জামায়াত একটি গণমুখী রাজনৈতিক দল। আপাতত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে আছি। পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও ১০টি আসনে জয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২২২টি আসনে প্রার্থী দিলেও ১৮টি আসনে জয়ী হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-৩, সাতক্ষীরা-২, পিরোজপুর-১ আসনসহ মোট তিনটি আসনে জয়ী হয় জামায়াত। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে ১৭টি আসনে বিজয়সহ চারটি সংরক্ষিত আসন পায় দলটি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি এবং চারটিতে এককভাবে নির্বাচন করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ২২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল জামায়াত।

জানা গেছে, ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দলের আমির কারাবন্দি ডা. শফিকুর রহমান (ঢাকা-১৫), ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান (রাজশাহী-১), সেক্রেটারি জেনারেল (কারাবন্দি) অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (খুলনা-৫), কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৫), ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের (কুমিল্লা-১১), ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), শাহজাহান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ঢাকা উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন (সিলেট-৬), ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ (পটুয়াখালী-২), মাওলানা আবদুল হাকিম (ঠাকুরগাঁও-২), মো. দেলাওয়ার হোসেন (ঠাকুরগাঁও-১), অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান (ঠাকুরগাঁও-৩), মাওলানা মো. খোদা বখস (দিনাজপুর-১), মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম (দিনাজপুর-৬), মনিরুজ্জামান মন্টু (নীলফামারী-২), মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম (নীলফামারী-৩), মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত (কুমিল্লা-১০), ড. মোবারক হোসাইন (কুমিল্লা-৫), মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী (কক্সবাজার-৪), অধ্যাপক গোলাম রব্বানী (রংপুর-৫), মাজেদুর রহমান সরকার (গাইবান্ধা-১), মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪), মাওলানা ইকবাল হুসাইন (পাবনা-৫), অধ্যাপক মতিয়ার রহমান (ঝিনাইদহ-৩), আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন (যশোর-২), অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ (বাগেরহাট-৩), অধ্যাপক আবদুল আলীম (বাগেরহাট-৪), মাওলানা আবুল কালাম আযাদ (খুলনা-৬), মুহাদ্দিস আবদুল খালেক (সাতক্ষীরা-২), মুফতি রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), গাজী নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা-৪), শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-১), মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (সিলেট-৫) ও হামিদুর রহমান আযাদ (কক্সবাজার-২)।

‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ (জয়পুরহাট-১), অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামান (বগুড়া-২), মাহাবুবুর রহমান বেলাল (রংপুর-৩), ডা. আবদুল বাসেত/নাজিবুর রহমান মোমেন (পাবনা-১), অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল (পাবনা-৪), তাজউদ্দিন (মেহেরপুর-১), গাজী এনামুল হক (যশোর-৫), অধ্যাপক মুক্তার আলী ও অধ্যাপক জসিম উদ্দিন (যশোর-৬), মাওলানা জহিরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৬), আনোয়ার ছিদ্দিক চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৪), মাওলানা ছাইফ উল্যাহ (নোয়াখালী-১) ও অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন (নোয়াখালী-৫)। তবে ‘এ’ ক্যাটাগরি নেতাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যায়। ‘বি’ ক্যাটাগরির সবাই মনোনয়ন পাবেন—এটি নিশ্চিত নয়।

এদিকে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাত হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জামায়াত কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা নেতিবাচক কাজে বিশ্বাস করে না। আমরা সব সময় অত্যাচারিত, নির্যাতিত, মিথ্যাচার-অপপ্রচারের শিকার হয়েছি। জামায়াত নিজ পায়ে দাঁড়ানো এবং নিজস্ব সিদ্ধান্তে পরিচালিত একটি বৃহৎ সুশৃঙ্খল দল। সরকারের সঙ্গে আঁতাতের কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, আমরা সব বিভাগে সমাবেশ করব। নির্বাচন নিয়ে আমাদের এখন কোনো ভাবনা নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হলে নির্বাচন নিয়ে ভাবব। তিনি বলেন, কেউ কাউকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানালে অসুবিধা কী?

১০ দফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ: দীর্ঘ এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসা জামায়াতে ইসলামী এবার ঢাকার বাইরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে। চলতি জুলাই মাসেই তারা রাজধানী ঢাকা ছাড়া সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আগস্টে কয়েকটি জেলা ও বিভাগ হয়ে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। আগামী ১৫ জুলাই সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে প্রথম সমাবেশ হবে। গত বুধবার সিলেট মহানগর জামায়াত সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করে। এরপর সমাবেশ করতে চায় চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়। এ ছাড়া রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও খুলনায়ও সমাবেশ আয়োজনে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই। মূলত নীরবতাকে কাটিয়ে উঠতে জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা ঢাকার পর এবার বিভাগীয় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে নবোদ্যমে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম চালু করাটা জামায়াতের অন্যতম লক্ষ্য। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, এই কর্মসূচিগুলোতে প্রশাসন বাধা দেবে না। তবে বাধা দিলে এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশলে হলেও মাঠে থাকবে জামায়াত। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ অনুমতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, সিলেটের পর পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় ও জেলা সদরে সমাবেশ হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণার পর ১৮ দিনের মাথায় পুলিশের অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াত। হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে দলটির সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে। অনেকেই মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত বা সমঝোতা হয়েছে জামায়াতের। এ নিয়ে জামায়াতের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপির সঙ্গেও জামায়াতের ভুল বোঝাবুঝি হয়। অবশ্য জামায়াত বলেছে, তারা ১০ জুনের সমাবেশের ব্যাপারে দৃঢ় ছিল। এ ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির সুযোগ নিয়েছে।

দাবি আদায়ে আন্দোলনই লক্ষ্য: বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল জামায়াতে ইসলামী। আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে বিএনপির মতো তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চলমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারের পতন। এ ছাড়া তাদের দাবির মধ্যে আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দলের আমিরসহ রাজবন্দিদের মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মতো জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো। তিনি বলেন, কারও পক্ষে বিপক্ষে নয়, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে জামায়াত যাবে না। গত রোববার এক কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াত কর্মীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং গণআন্দোলনের মুখে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে।

মিত্রদের নিয়ে জোট নয়, সমর্থন চায়: এদিকে জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সমমনা অপরাপর ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে তারা তৎপর আছেন। বিশেষ করে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হচ্ছে। উভয় দলই সরকাবিরোধী মনোভাব নিয়ে নিজস্ব অবস্থানে রয়েছে। তবে এ দুই সংগঠনের সঙ্গে কোনো জোট গড়ার সম্ভাবনা নেই। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের ব্যাপারে আন্দোলন-কর্মসূচিতে এ দুই দলের সমর্থন প্রত্যাশা করছে জামায়াতে ইসলামী।

জানা গেছে, সরকার ও জামায়াতের সম্পর্কের বিষয়ে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে জামায়াত তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে, তা নিয়ে জামায়াতের সিনিয়র নেতারা একাধিক বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে স্বাতন্ত্র্য অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য সতর্কতার সঙ্গে পথ চলার নীতিও গ্রহণ করেছে দলটি। সব বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগোতে চায় জামায়াত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত: রাজনৈতিক গবেষক ও বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক মনে করেন, জামায়াত বরাবরই ভুল পথে হাঁটে। সম্প্রতি তাদের নেতারা বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। ঈদে শুভেচ্ছা তারা জানাতেই পারেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাদের জোটের বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় জামায়াত মনে করে, এমন শুভেচ্ছা জানিয়ে বা ৩০০ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপিকে চাপে রাখবে। সম্প্রতি তারা পুলিশকে ফুল দিয়ে সমাবেশও করেছে। কৌশল হোক আর যা-ই হোক, পুলিশকে ফুল দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। পুলিশকে ফুল দেওয়া যদি আঁতাত না হয়, তবে বলতে হবে এটা খুবই অপরিপক্ব আচরণ। তার মতে, ২০১৮ সালে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও সামনে একা একাই নির্বাচন করা লাগতে পারে জামায়াতকে।

 

সূত্র: কালবেলা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button