কালীগঞ্জে এক হাফেজের মৃত্যুতে আত্মগোপনে তিন তরুণ, থানায় অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জের বক্তারপুর ইউনিয়নের মাজুখান এলাকার এক হাফেজের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে তিন তরুণ।
এ ঘটনায় পলাতক তিন তরুণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
বুধবার (৫ জুলাই) রাতে নিহতের পিতা বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছেন।
নিহতের নাম তাওহিদ (১৭)। সে বক্তারপুর ইউনিয়নের মাজুখান এলাকার আক্তার হোসেন শেখের ছেলে। তাওহিদ নরসিংদী শিবপুর শাষপুর দারুল উলুম হোসাইনীয়া মাদ্রাসা থেকে সম্প্রতি হাফেজি সম্পূর্ণ করেছে। বর্তমানে সে বাড়িতে থেকে স্থানীয় এক রাজ মিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতো।
অভিযুক্তরা হলো, একই এলাকার আজমাইল সরকারের ছেলে জীবি খান (১৮), সুরুজ আলী সরকারের ছেলে সৌরভ (১৯) এবং মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে ইমরান (২০)।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুলাই (রোববার) বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে তাওহিদ ফুলদী বাঘপাড়া গ্রামের হোসেন (৪০) ঠিকাদারের সঙ্গে দেখা করে কাজের বিষয়ে কথা বলতে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যার পর সে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় ফুলদী বাজারে পৌঁছালে অভিযুক্তদের সঙ্গে তার দেখা হয়। এক পর্যায়ে তাওহিদ অভিযুক্ত জীবি খানের অটো রিকশায় চড়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ওই অটো রিকশায় অভিযুক্ত সৌরভ ও ইমরানও ছিলো। সে সময় তাদের সঙ্গে তাওহিদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা তাওহিদকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর জখম করে। এতে তাওহিদ অজ্ঞান হয়ে গেলে অভিযুক্তরা তাকে অটো রিকশা থেকে ধাক্কা দিয়ে স্থানীয় মনিরের দোকানের সামনে সড়কে ফেলে রেখে দ্রুত অন্যত্র আত্মগোপনে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাওহিদকে মুমুর্ষ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে তার স্বজনদের খবর দেয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় তাওহিদকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে তাওহিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে কালীগঞ্জ থানায় বিষয়টি অবগত করে সোমবার রাতে স্থানীয় বাইতুর রহমান জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা সহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জন বর্তমানে তাওহিদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি সহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র ও স্থানীয় ইউপি সদস্য অলিউল্লাহ মোড়ল জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে অভিযুক্তরা এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।
তারা আরো জানান, সোমবার বিকেলে কালীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল ও অভিযুক্তের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
নিহত তাওহিদের স্বজনরা বলেন, অভিযুক্তরা মারধরের পর তাওহিদ অজ্ঞান হলে তাকে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়। তাদের মারধরের কারণেই তাওহিদের মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, বুধবার নিহতের বাবা বাদি হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।