আন্তর্জাতিক

মোদিকে প্রশ্ন করা মুসলিম সাংবাদিক হেনস্থায় হোয়াইট হাউসের নিন্দা

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে তাকে ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করার জেরে একজন মার্কিন মুসলিম সাংবাদিককে সোশ্যাল মিডিয়াতে যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা করেছে হোয়াইট হাউস।

সোমবার (২৬ জুন) এক প্রশ্নের উত্তরে হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কার্বি জানান, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকিকে যে অনলাইনে হেনস্থা করা হচ্ছে সে বিষয়ে তারা অবহিত।

এই ধরনের আচরণকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে (নরেন্দ্র মোদির) রাষ্ট্রীয় সফরের সময় গণতন্ত্রের যে নীতি প্রদর্শিত হয়েছিল এটা তারও পরিপন্থী।’

সাবরিনা সিদ্দিকির সমর্থনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি একজন সম্মানীয় সাংবাদিক, যিনি তার সততা ও নিরেপক্ষ রিপোর্টিংয়ের জন্য পরিচিত।’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকেলে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মোদিকে প্রশ্ন করার পর থেকেই সাবরিনা সিদ্দিকি ভারত ও ভারতের বাইরে দক্ষিণপন্থী ও হিন্দুত্ববাদীদের ট্রোলিংয়ের নিশানায় পরিণত হন।

ভারতের শাসক দল বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া এটিকে ‘অভিসন্ধিমূলক’ বলে দাবি করেন।

এদিকে, সাবরিন সিদ্দিকি ভারতীয় ক্রিকেট দলকে তার সাপোর্ট করার পুরনো ছবি পোস্ট করে প্রমাণের করার চেষ্টা করেন যে, তিনি মোটেও ভারতবিরোধী নন।

কিন্তু পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে তার পোস্ট করা শুভেচ্ছা বার্তা বা আরও অন্যান্য পোস্ট খুঁজে বের করে বিজেপি সমর্থকরা দেখানোর চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন যে, সাবরিনা সিদ্দিকি আসলে একজন পাকিস্তানপ্রেমী এবং ভারতকে অপদস্থ করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।

ওয়াশিংটন ডিসিতে নরেন্দ্র মোদি এবং সাবরিনা সিদ্দিকির সেই প্রশ্নোত্তর পর্বেরই আক্ষরিক অনুবাদ দেওয়া হলো।

সাবরিনা সিদ্দিকি বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারত দীর্ঘকাল ধরে গর্বের সঙ্গে নিজের পরিচয় দিয়ে আসছে – কিন্তু বহু মানবাধিকার সংগঠনই বলে থাকে যে আপনাদের সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে এবং সমালোচকদেরও কন্ঠস্বরও স্তব্ধ করতে চায়। আজ যে আপনি হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে বিশ্বের বহু নেতাই গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নানা অঙ্গীকার করে গেছেন। (আপনার কাছে জানতে চাইব) আপনার দেশে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের অধিকার উন্নত করতে এবং বাকস্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে আপনি ও আপনার সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক?’

জবাবে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি এটা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি যে আপনি বলছেন লোকে বলে … আরে শুধু লোকে বলে না, ভারত আসলেই একটি গণতন্ত্র! প্রেসিডেন্ট বাইডেনও যেমনটা বলেছেন, আমেরিকা ও ভারত – আমাদের উভয়েরই ডিএনএ-তে গণতন্ত্র আছে। গণতন্ত্র আমাদের চেতনায়, গণতন্ত্র আমাদের শিরায় শিরায়। আর আমাদের পূর্বজরা এই ভাবনাকেই আমাদের দেশের সংবিধানের মধ্যে দিয়ে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। গণতন্ত্রের মূল্যবোধে আধারিত সেই সংবিধানের ভিত্তিতেই কিন্তু আমাদের সরকার পরিচালিত হয়। আর আমরা এটাও প্রমাণ করে দিয়েছি যে আমাদের গণতন্ত্র কিন্তু ‘ডেলিভার’ করতে পারে … আমি যখন ‘ডেলিভার’ কথাটা বলছি তখন কিন্তু জাতপাত, ধর্ম, লিঙ্গ – কোনো ধরনের বৈষম্যর সেখানে ঠাঁই নেই (এটাও জানিয়ে দিতে চাই)।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্রের কথা যখন বলছেন, তখন যদি তাতে মানবিক মূল্যবোধ, মানবিকতা ও মানবাধিকার না-থাকে তাহলে তো সেটা গণতন্ত্রই নয়! ফলে আপনি যখন গণতন্ত্রর কথা বলছেন ও গণতন্ত্রকে মেনে নিচ্ছেন, সেখানে বৈষম্যর কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এই জন্যই ভারত ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস, সব কা প্রয়াস’ এই মৌলিক দর্শন নিয়ে এগিয়ে চলে। ভারতে সরকার যে সব সুযোগ-সুবিধা দেয় তাতে সব নাগরিক অ্যাকসেস পান। যাদেরই সেই অধিকার প্রাপ্য তারা সবাই সেটা পান। এই কারণেই ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে কোনো ভেদভাব নেই। ধর্ম, জাতি, বয়স বা ভৌগোলিক অবস্থান –কোনোটার ভিত্তিতেই আমরা কোনো বৈষম্য করি না।’

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button