অর্থনীতিআন্তর্জাতিকআলোচিত

ভারতের টাকশাল থেকে ৮৮ হাজার কোটি রূপি উধাও!

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের চলতি অর্থনীতি থেকে উধাও ৮৮ হাজার কোটি রুপি! গোটাটাই নতুন ডিজাইনের ৫০০ রুপির নোট। টাকশালে ছাপা হলেও ওই বিপুল সংখ্যক নোট এসে পৌঁছায়নি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সিন্দুকে।

সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে এক ব্যক্তির আরটিআইয়ের কারণে।

তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে মনোরঞ্জন রায় নামে এক সমাজকর্মী সরকারকে এ সংক্রান্ত করা প্রশ্নে যে উত্তরে এসেছে, তাতেই চোখ কপালে উঠেছে দেশবাসীর। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, তিনটি টাকশালে নতুন ডিজাইনের ৫০০ রুপির মোট ৮৮১ কোটি ৬৫ হাজার নোট ছাপা হয়েছিল। কিন্তু তারমধ্যে ৭২৬ কোটি রুপির নোট আরবিআইয়ের হাতে আসে। আসেনি ১৭৬ কোটি ৬৫ হাজার রুপির নোট। যার মোট মূল্য ৮৮ হাজার কোটি রুপির বেশি।

কোথায় গেল ওই বিপুল অর্থ? বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় শনিবার (১৭ জুন) স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১১টা নাগাদ টুইটারে বিবৃতি দেন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মুখপাত্র। তার অভিমত, এই খবর সঠিক নয়। আরটিআইয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আরবিআই জানিয়েছে, যে সমস্ত নোট আসে, তার সম্পূর্ণ হিসাব থাকে। নোট ছাপানো, সংগ্রহ ও বণ্টনের গোটা প্রক্রিয়াটি একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে হয়ে থাকে। এর একটি কড়া প্রোটোকল বা নিয়ম রয়েছে, তা সর্বদা পালন করা হয়।

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তরফে এই বিভ্রান্তির সাফাই দিয়ে আরও জানানো হয়েছে যে, আরবিআই নিয়মিত এই সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রকাশ করে থাকে। আগামীতেও করবে। তাই সাধারণ মানুষ যেন ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্যের জন্য রিজার্ভ ব্যাংকের ওপরই ভরসা রাখেন।

তবে মনোরঞ্জনের আরটিআইয়ের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাংক ১৬৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ রুপির নোট ছাপায় মহারাষ্ট্রের নাসিক টাকশাল। এছাড়া বেঙ্গালুরু টাকশালে মুদ্রিত ওই অংকের নোটের সংখ্যা ছিল ৫১৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার এবং মধ্যপ্রদেশের দেওয়াস টাকশালে ১৯৫ কোটি ৩০ লাখ। সবমিলিয়ে ৮৮১ কোটি ৬৫ হাজার ৫০০ রুপির নোট। কিন্তু, আরবিআই- এর কাছে পৌঁছেছে ৭২৬ কোটি ৫০০ রুপির নোট।

তাহলে বাকি নোট কোথায় গেল? অর্থাৎ ১৭৬ কোটি ৬৫ হাজার রুপির নোট উধাও হওয়ার তথ্য জানায়নি আরবিআই। আরটিআই-এর মাধ্যমে আরও জানা গিয়েছে যে, রিজার্ভ ব্যাংকের যে সময়কার নোটের হিসাব মিলছে না, সেইসময় আরবিআই-এর গভর্নর ছিলেন রঘুরাম রাজন। প্রসঙ্গত, এ সংস্থার বর্তমান গভর্নর শক্তিকান্ত দাস।

এই অসঙ্গতির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মনোরঞ্জন রায়। সেন্ট্রাল ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র কাছেও পাঠিয়েছেন আরটিআইয়ে প্রাপ্ত তথ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন মনোরঞ্জন। তার বক্তব্য, ছাপাখানায় ছাপা মোট নোট ও আরবিআই কাছে পাওয়া মোট নোটের পরিমাণের মধ্যে এই বিশাল অংকের গরমিলের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে যে বড় মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে, তার প্রতি উদাসীন শীর্ষ ব্যাংক। এ ঘটনায় ভারতীয় অর্থনীতির সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তার মতে, স্থিতিশীলতাকে উদ্বেগের মুখে ফেলে দিয়েছে এই তথ্য। এ ঘটনায় তিনি দাবি জানিয়েছেন, ৩ সরকারি টাকশালে ছাপা নোটের হিসেবে গরমিল তদন্ত করার জন্য। যদিও আরবিআই দাবি করেছে তাদের কাছে সবকিছুর নথি আছে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button