নতুন আয়কর আইনে জমিতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আসছে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের মতো জমি ক্রয়েও অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বিনিয়োগ করে সাদা করার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। তবে এমন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের কর দিতে হবে করদাতাকে। এ টাকায় গ্রামে জমি কিনতে কাঠাপ্রতি ৬৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকা এবং মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি কাঠার বিপরীতে গুনতে হবে প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
নতুন আয়কর আইনে ঢাকার অন্যান্য এলাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ লাখ ৩২ হাজার থেকে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থে গ্রামে জমি কেনায় কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি সর্বনিম্ন ৬৩ হাজার টাকা। আয়কর আইন পাসের জন্য সংসদে ইতোমধ্যে বিল আকারে উত্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জমিতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি জমিতে এ সুযোগ বহাল রাখার প্রস্তাব ছিল। তবে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত যে বাজেট পাস হয়, তাতে জমিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি।
জমি ও ফ্ল্যাটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে আইন করে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন বেসরকারি আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এটা ভালো প্রস্তাব, তবে আইন করে দুই বছর পর যাতে তা এসআরও জারি করে বাতিল করা না হয়। কামাল মাহমুদ মনে করেন, অপ্রদর্শিত অর্থ ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট ও জমিতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার কমবে। তবে করহার কম ধরলে তা কার্যকর হবে বেশি।
প্রস্তাবিত আইনে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে, অপ্রদর্শিত আয় বলতে বৈধ কোনো উৎস থেকে অর্জিত আয় হতে হবে, যা আগে আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি এবং কোনো অবৈধ উৎস বা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। প্রস্তাবিত আইনে এ বিষয়ে যা বলা হয়েছে, আইনের এ বিধান প্রযোজ্য হবে, যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীন কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে অর্জিত হয় বা কোনো বৈধ উৎস থেকে অর্জিত না হয়। এমন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়ের উৎস না জানালেও নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট অর্থের উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে মর্মে গণ্য করা হবে।
এলাকভেদে করহার
এলাকাভেদে জমিতে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন করহার প্রস্তাব করা হয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থে কেনা জমিটি ঢাকার গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় হলে, সেক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য ১৫ হাজার টাকা হারে সরকারকে কর দিতে হবে। এ হিসাবে প্রতি কাঠা জমির জন্য কর হবে প্রায় ১৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকার জমিতে বিনিয়োগ করলে প্রতি বর্গমিটারে ১০ হাজার টাকা বা কাঠায় প্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অন্যান্য এলাকা এবং দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা বা কাঠাপ্রতি সরকারকে কর দিতে হবে ৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা। পৌরসভা বা জেলা সদরে হলে বর্গমিটারে ১ হাজার টাকা বা কাঠাপ্রতি ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং দেশের অন্য সব এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা বা কাঠাপ্রতি ৬৩ হাজার ২৩০ টাকা কর দিতে হবে।
একাধিক জমি বা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ থাকলে করহার বাড়বে
অপ্রদর্শিত অর্থে জমিতে বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট করদাতার কোনো সিটি করপোরেশন এলাকায় এক বা একাধিক ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট বা জমিতে বিনিয়োগ থাকলে নতুন বিনিয়োগে উল্লিখিত কর হারের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ কর দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি অপ্রদর্শিত অর্থে জমি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ বিষয়ে কর প্রদান বা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শনের আগে এনবিআর থেকে কোনো আয় বা সম্পদ বা এর অংশবিশেষ গোপন করা এবং কর ফাঁকির বিষয়ে কোনো নোটিশ প্রদান করলে উল্লিখিত হারের দ্বিগুণ কর দিতে হবে।