আলোচিতলাইফস্টাইল

৮৬% শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার কারণ ইন্টারনেট

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। ইন্টারনেট ব্যাবহার করেন এমন এক হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। তাদের মধ্যে ৮৫.৯% শিক্ষার্থীই বলছেন, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে।

শনিবার (১০ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের দায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে “পুরোপুরি দায়ী” মনে করেন ২৬.১% শিক্ষার্থী আর “মোটামুটি দায়ী” ভাবেন ৫৯.৮% শিক্ষার্থী। তবে মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী মনে করেন না ৮.৩% শিক্ষার্থী।

সমীক্ষা অনুসারে, পড়াশোনা বিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৩৮.২% শিক্ষার্থী। আর অবসর সময় কাটাতে ৬৭.৫%, যোগাযোগের প্রয়োজনে ৪২.৯%, অনলাইন গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতে ২৪.৯%, অনলাইনে কেনাকাটা করতে ১২.৬% এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৮% শিক্ষার্থী।

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৩৪.৩% জানান, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে “প্রচণ্ড নেতিবাচক” প্রভাব ফেলছে। ‍আর ৫৭.২% শিক্ষার্থী মনে করেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে “কিছুটা নেতিবাচক” প্রভাব ফেলছে ইন্টারনেট।

সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ৫৯.৬% শিক্ষার্থী মনে করেন, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বিঘ্নের জন্যে দায়ী। ১৭.৮% ইন্টারনেটে পর্ণ দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২৩% শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছেন, ৩৫.৬% ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করেছেন এবং ২০.৩% সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।

সমীক্ষা অনুসারে, ইন্টারনেটের কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছেন এবং ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে পড়াশোনা হুমকিতে পড়ছেন। এছাড়াও পারিবারিক সম্পর্কে ঘাটতি, সামাজিক সম্পর্কেও পিছিয়ে পড়া, ব্যক্তি জীবনে বিরূপ প্রভাব, ঘুম ও শারীরিক সমস্যাসহ আচরণগত পরিবর্তনও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ সময়ই ২৬.৫% শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব বিস্তার করে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার কিংবা ফলোয়ার সংখ্যা বাড়া বা কমা বিষয়ক ব্যাপারে। তবে ৩৫.৭% শিক্ষার্থী জানান, তাদের আত্মবিশ্বাসের উপর এমন প্রভাব মাঝে-মধ্যে পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যের সফলতায় ১০.৪% শিক্ষার্থীর মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অন্যের সফলতার খবর ১০.৫%-কে ঈর্ষাকাতর করে তোলে এবং ১৮.৭% নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন।

অন্যদিকে, ৩৪.৪% শিক্ষার্থী এ ধরনের খবর থেকে উৎসাহিত হন। তবে ২৬% শিক্ষার্থীর ভেতর এই বিষয়ক খবর কোনো তারতম্যের সৃষ্টি করে না।

জরিপের ফলাফল নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বেন। কিন্তু তারা ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চান। কারণ আমাদের দেশে বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো প্রায়ই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের একটা অংশ পর্ণ দেখা, অনলাইনে গেম খেলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দেখা ইত্যাদি কাজে যুক্ত থাকে। তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিজিটাল লিটারেসি না থাকায় তারা ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা দেখে আসছি অনলাইনভিত্তিক অপকর্ম হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে। সাইবার ক্রাইম, ব্ল্যাকমেইল করাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলছেন। এমনকি অনেকে আত্মহত্যা করতেও উৎসাহিত হন।”

সমস্যা সমাধানে আঁচল ফাউন্ডেশন কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে- ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে স্কুল, কলেজগুলোতে “ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম” চালু করা, ইন্টারনেট রেসকিউ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি কাটিয়ে উঠতে কাউন্সিলিং, থেরাপি এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করা, সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগে ইন্টারনেট নির্ভরতার পরিবর্তে সরাসরি যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে প্রচারণা চালানো।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button