পরিবর্তন না হলে মালয়েশিয়া টিকবে না : আনোয়ার ইব্রাহিম

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘মালয়েশিয়াকে পরিবর্তন করতে হবে, নতুবা এটি টিকবে না।’
তিনি আল জাজিরার ১০১ ইস্ট প্রোগ্রামের সঙ্গে এক বিস্তারিত সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘যখন শাসনের কথা আসে, তখন আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব। আর পরিবর্তন কার্যকর করার কারণ দেশ কিছুটা ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং পরিবর্তনের সংকল্প না থাকলে, আমি বিশ্বাস করি না মালয়েশিয়া টিকে থাকবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, মালয়েশিয়াকে তিনি জাতিভিত্তিক থেকে প্রয়োজনে রূপান্তরভিত্তিক ইতিবাচক কর্ম নীতিতে ফেরাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
৭৫ বছর বয়সি আনোয়ার ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
তিনি নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডে পরিণত হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠেছিলেন।
এশীয় আর্থিক সংকটের মধ্যে আনোয়ারকে বরখাস্ত করা এবং তাকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করার বিয়টি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তিনি।
তাকে দুই বার কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
মালয়েশিয়া একটি বহু-জাতিগত দেশ হলেও দেশটির প্রচলিত নীতি মুসলিম মালয় এবং আদিবাসীদের দ্বারা গঠিত সংখ্যাগরিষ্ঠদের ১৯৭০ সাল থেকে সুবিধা দিয়ে আসছে।
এই জাতীয় নীতিগুলো চাকরি থেকে শিক্ষা এবং বাসস্থানের ক্ষেত্রে এই জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে অগ্রাধিকারভিত্তিক সুবিধা দেয়।
১৯৬৯ সালের মে মাসে মালয় এবং চীনা জাতিগতদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গার পরে একটি সামাজিক প্রকৌশল কর্মসূচির অংশ হিসাবে ওই সব নীতি চালু করা হয়েছিল।
নীতিগুলো অস্থায়ী হওয়ার কথা থাকলেও, সেগুলো এখনও চালু রয়েছে, যা দেশের সংখ্যালঘু চীনা ও ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
এদের অনেকে অন্যত্র ভাল সুযোগের সন্ধানে দেশ ছেড়ে চলে যেতেও বাধ্য হয়েছে।
আনোয়ার বলেন, ‘আমার চাহিদাভিত্তিক সংস্কার পদ্ধতি মালয়দের জাতিভিত্তিক নীতির চেয়ে বেশি সাহায্য করবে। কারণ, জাতিভিত্তিক নীতিগুলো যে, কয়েকটি অভিজাত এবং তাদের বন্ধুরা নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করে, তা প্রমাণিত হয়েছে।’
আনোয়ার একটি বহুজাতিক দল থেকে মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির নতুন ভিত্তি তৈরি করছেন।
আনোয়ার তার জোটের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে উদ্বেগ দূর করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জোট টিকে থাকে কিছু মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। সেগুলো হলো-সুশাসন, দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং অর্থনৈতিক নীতি।’
দেশটিতে আনোয়ারের প্রধান প্রতিপক্ষ পেরিকটান ন্যাশনাল (ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স) রক্ষণশীল মালয়-মুসলিম দলগুলোর জোট।
এটি ইতিমধ্যেই আনোয়ারকে ‘বেপরোয়া’ বলে অভিহিত করেছে।
আগস্টের মধ্যে ছয়টি রাজ্য নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ওই নির্বাচনকে সমানে রেখে জাতি এবং ধর্ম নিয়ে বিতর্ক আরও উত্তপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আনোয়ার দাবি করেছেন যে, দেশের রাজনৈতিক অভিজাতদের নিয়ে গঠিত কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কোটি কোটি টাকা নিয়ে জোট বেঁধেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন আমি ক্ষমতায় আছি, আমি অলস বসে নেই। যদি তারা লোক কিনে, লোকেদের ঘুষ দিয়ে এবং তাদের জমি রক্ষার জন্য সমর্থন চাইতে চায় আমি তাদের সঙ্গে লড়াই করব।’
সূত্র : আলজাজিরা