গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের ১৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৪৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে চলছে। বাকি ১০৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৫৩টি রক্ষণাবেক্ষণ বা জ্বালানির অভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, এই ৫৩টি প্লান্টের উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯৩০ মেগাওয়াট। বাকি থাকে আরও ৫১টি প্ল্যান্ট, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৮৫৫ মেগাওয়াট। কিন্তু, জ্বালানির অভাবে এগুলো ৩ হাজার ৫৬৮ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারছে।
আর এসব কারণে রাজধানীতে প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
দিনাজপুর ও সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকায় ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ঘণ্টায় গড় লোডশেডিং হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬ মেগাওয়াট। প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৩ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট।
কয়লা সংকটের কারণে গত সোমবার বন্ধ হয়ে যায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কয়লা সংকটে ৩ সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত ১৬ মে পুনরায় চালু হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু, এটি সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে। এটি ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে দিনে মাত্র ৩০০-৩৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কয়লার শেষ চালান দিয়ে যতদিন সম্ভব বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখতে বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, চলতি মাসের কয়লা আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলে দেওয়া হয়েছে। তাই আপাতত কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু, এলসি খুলতে আবার দেরি হলে সমস্যা হবে।
৫টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে শুধুমাত্র ভারতের ঝাড়খন্ডের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে।
বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র তাদের ধারণক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তাপপ্রবাহের কারণে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক অনেক প্লান্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা মনে করছেন, সরকার দারুণ কোনো ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘রমজানের আগেও আমরা একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। তখনো বিদ্যুতের চাহিদা এমন ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু রমজানে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেনি। প্রয়োজনীয় ডলার নিশ্চিত করা ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পাওনা পরিশোধে সরকারের উদ্যোগের কারণে তা সম্ভব হয়েছিল। একই উদ্যোগ এখন নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘ডলার ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। তাই আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছি না। এ ছাড়া সরকারের কাছে অনেক প্লান্টের কাছে মোটা অঙ্কের পাওনা আছে।’
বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ পর্যন্ত আইপিপিগুলোর পাওনা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল অনুষদের ডিন এম শামসুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘খাদ্য ও কৃষি খাতের মতো জ্বালানি খাতকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার অনেক প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু, এখানে পরিস্থিতি বিপরীত। সরকার এই খাতকে শুধু রাজস্বের জন্য ব্যবহার করে। সরকারের এমন মনোভাবই চলমান সংকটের মূল কারণ।’
বুয়েটের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম তামিম মনে সংবাদ মাধ্যমকে করেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি সংকট নেই। মূল সংকট হলো ডলার ঘাটতি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ মে পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯.৯ বিলিয়ন ডলারে। যা প্রায় ৪ মাসের আমদানি বিল মেটানোর জন্য যথেষ্ট।