গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হুমকির মুখে দেশের জনশক্তি রপ্তানি। ঘুষ, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা আর হয়রানির মুখে অনেকেই এ খাত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন। এ অবস্থায় দেশ রেমিট্যান্স নিয়েও গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের অভিযোগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ইদানীং তাদের মারাত্মকভাবে হয়রানি করছেন। ঘুষ বা চাঁদার দাবিতে এমনকি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগই আসে জনশক্তি খাত থেকে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট নিরসনে যখন সরকার হিমশিম খাচ্ছে; তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার চাঁদাবাজি, ঘুষ আর হয়রানিমূলক তৎপরতায় জনশক্তি খাত পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। যার ফলে সৃষ্ট রেমিট্যান্স সংকটে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপ হতে পারে আশঙ্কা। এটাকে দেশের জনশক্তি খাতের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে এজেন্সির মালিকরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। পাশাপাশি এটাও তাদেরকে বলা হয়েছে, কেউ অবৈধ জনশক্তি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। জনশক্তি কর্মসংস্থান থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে হয়রানি না করে সেটি দেখা হবে।
বেশ কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন, গত মার্চে সৌদি আরবে কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক আটকের পর থেকেই বিষয়টিকে চাঁদাবাজির হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন এদেশের তিনটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা। সৌদি আরবে অবস্থানরত কয়েকজনের জনশক্তি রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চললেও এখন বাংলাদেশে এ খাতের বড় বড় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মনগড়া ও উদ্ভট অভিযোগ তুলে হয়রানি করা হচ্ছে। স্ব-উদ্যোগে তদন্তের নামে তারা বিভিন্ন জনশক্তি ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে রীতিমতো ঘুষ-চাঁদাবাজির মহোৎসব শুরু করেছে। ঘুষ বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মানি লন্ডারিং ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন আইনে মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ডিবি নিজে বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় দেশের খ্যাতনামা ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি গায়েবি মামলা করেছে বলে অভিযোগ। এ মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগকারী যেমন নেই, তেমনি সরকারি অনুমোদনও নেই। বেশ কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকের অভিযোগ, এসবির এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বড় বড় রিক্রুটিং ব্যবসায়ীকে ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কেউ দেখা করতে গেলে তার বিরুদ্ধে উদ্ভট অভিযোগ তুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মোটা অঙ্কের টাকা দিলে এই হয়রানি থেকে রেহাই মিলছে বলেও অভিযোগ। ডিএমপির ডিবির এক অতিরিক্ত উপকমিশনারের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এর অংশ হিসেবে ২৫ জনশক্তি ব্যবসায়ীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিবির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সিন্ডিকেট এই চাঁদাবাজি আর হয়রানিতে লিপ্ত। তারা এ কাজে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স তুর্কি অ্যাসোসিয়েটসের মালিক মো. সাহাবুদ্দিনকে মাঠে নামিয়েছে। তিনিই ডিবির হয়ে হয়রানি মুখে থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নেগোসিয়েশেনের দায়িত্ব পালন করছেন। মোটা অঙ্কের ঘুষ বা চাঁদা দিলে সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন। একইভাবে সিআইডির কতিপয় কর্মকর্তাও স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নামে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ। যার দায়িত্বে রয়েছেন এক এএসপি। তিনি দেশের বড় বড় জনশক্তি রপ্তানিকারকদের অর্থাৎ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের ফোন করে ডেকে নিয়ে সৌদি আরবের ঘটনার সঙ্গে জড়িত করা অথবা মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে ওই ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যদের এনআইডি, ব্যাংক এস্টেটমেন্ট ও সম্পদের হিসাব-নিকাশ নিচ্ছেন। আদালতের আদেশ ছাড়া যা নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি।
জানা গেছে, সম্প্রতি এক ব্যবসায়ী হয়রানির মুখে এক কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে পার পেয়েছেন। এভাবে অন্তত ৩০ ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা করে ঘুষ দাবি করেছে চক্রটি।
কয়েকজন জনশক্তি রপ্তানিকারক ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তাদেরকে প্রতি পদে পদে হয়রানি পোহাতে হয়। সরকার যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়; তবে তাদের পক্ষে আর সম্মান নিয়ে এ ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
সূত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ