গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কয়লার অভাবে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালীর ১,৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ইউনিট গত ২৫ মে বন্ধ হয়ে যায়।
অপর ইউনিটটি সোমবার (০৫ জুন) সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
আগামী ২০-২৫ দিন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকতে পারে বলে এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এ কারণে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বর্তমান পাওনা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ডলার সংকট থাকায় এলসি খোলা যাচ্ছিল না। আর এ কারণে কয়লা আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। কয়লার অভাবে তাই বন্ধ হয়ে গেল বিদ্যুৎ উৎপাদন।
শাহ আব্দুল হাসিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এতে নতুন করে কয়লা সরবরাহ শুরু হবে। তবে কয়লা আসতে অন্তত ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। এ সময় বন্ধ থাকবে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর কয়লা এলে জুনের শেষ সপ্তাহে আবারও উৎপাদন শুরু হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসি) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান মালিকানা রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি, সেই কোম্পানির দাম পরিশোধ করে সিএমসি। বিসিপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কয়লা আমদানিসংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয় মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রোভাইড করে সিএমসি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলো- আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা কিনি, তার ইনভয়েসের এগেইনস্টে সিএমসি এলসি করে পেমেন্ট করে। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের পেমেন্ট মেথড হলো ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ)। শর্তানুযায়ী, আমরা ছয় মাস পর সিএমসিকে বিল দেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কৌল-মাইনিং কোম্পানিকে সিএমসি যে পেমেন্ট দেবে, আমরা জুলাইয়ে সিএমসিকে তা পরিশোধ করব। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাস তো পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরও পাঁচ মাস চলে গেছে। আমরা বকেয়া শোধ করতে পারছি না।’
এত টাকা বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করে কয়লা আমদানি অব্যহত রাখা জরুরি। কারণ, কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয় পড়বে। ফলে একদিকে সাধারণ মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়বে; অন্যদিকে শিল্পোৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।