উড়িষ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় উড়িষ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। লাইনচ্যুত ও বিধ্বস্ত হওয়া বগির মধ্য থেকে এখনও ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ জনে। আহত হয়েছেন ৯ শতাধিক।
কর্মকর্তারা শনিবার (০৩ জুন) বলেছেন, ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটি ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক রেল দুর্ঘটনা। খবর এএফপির
শুক্রবার (২ জুন) স্থানীয় সময় রাত ৭টা ২০ মিনিটে বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার স্টেশন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওডিশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছিল। চেন্নাইগামী শালিমার–চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওই এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রাজ্যে শনিবার এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি।
উড়িষ্যায় মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা বলেছেন, বালাসোর জেলায় ২ শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের পর বিশ্বে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক ট্রেন দুর্ঘটনা।
রাতে হাওড়া এবং শালিমার স্টেশনে ভিড় করেছেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা।
এদিকে ভারতের কেন্দ্রীর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।
দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘ওডিশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারকে ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শোক ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে টুইট করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
শনিবার ভোর হওয়ার সাথে সাথে উদ্ধারকর্মীরা ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুরো চিত্র দেখতে সক্ষম হন। ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সুধাংশু সারঙ্গি বলেছেন যে, মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮ জনে।
তিনি বলেন, উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। অনেকে গুরুতর আহত।
ভারতে রেল দুর্ঘটনার জন্য অপরিচিত নয় এবং বেশ কয়েকটি বিপর্যয় দেখেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ছিল ১৯৮১ সালে, যখন বিহারে একটি সেতু পার হওয়ার সময় একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয় এবং নদীতে পড়ে যায়। এতে ৮০০ থেকে ১০০০ লোক মারা যায়।
তবে শুক্রবারের দুর্ঘটনাটি ১৯৯০ এর দশকের পর সবচেয়ে খারাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা নিশ্চিত করেছেন যে রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার (১২৫ মাইল) দূরত্বে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পরে প্রায় ৮৫০ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার এখন (যাত্রীদের) উদ্ধার করা এবং আহতদের স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা।
ভারতীয় রেলওয়ের নির্বাহী পরিচালক অমিতাভ শর্মা বলেছেন যে, দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায় সক্রিয়ভাবে জড়িত।
এরই মধ্যে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় উচ্চ মাত্রার তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া ওড়িশায় এক দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটিতে বাংলাদেশি যাত্রী থাকতে পারে। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি এই ট্রেনে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত করেন। দুর্ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি থাকলে তাদের তথ্য জানতে হটলাইন (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বর দিয়েছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন।
শুক্রবার রাতে উপ-হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই হটলাইনের কথা জানিয়েছে।