আলোচিত

২০২২ সালে বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন ভিসা ইস্যু হয়েছে ২৯ হাজার

এক দশকে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু সোয়া ২ লাখের বেশি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য সোয়া দুই লাখেরও বেশি নন-ইমিগ্র্যান্ট মার্কিন ভিসা ইস্যু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরও এ ধরনের ভিসা ইস্যু হয়েছে ২৯ হাজার ২০২টি। মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ভিসা ইস্যুর পরিমাণ কিছুটা কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়গুলোয় তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসেও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশীদের জন্য মোট ৪ হাজার ৬৩৪টি নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বি১/বি২ ক্যাটাগরির। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক ও পর্যটনের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র গমনের আবেদন করা হলে এ ক্যাটাগরির ভিসা ইস্যু করা হয়। মার্চে বি১/বি২ ক্যাটাগরির অধীনে বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০টি। আর শুধু ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক কারণে (বি১ ক্যাটাগরি) ইস্যুকৃত ভিসার সংখ্যা ১৫।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করছে। যদিও ভিসা ইস্যুর পরিসংখ্যানে তাদের অংশ তুলনামূলক কম। মার্চে শিক্ষার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার (এফ১ ক্যাটাগরি) ভিসা ইস্যু হয়েছে ২৭২টি। আর শিক্ষার্থীর স্বামী/স্ত্রী অথবা সন্তানদের (এফ২ ক্যাটাগরি) জন্য মোট ভিসা ইস্যু হয়েছে ২১৭টি।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু বাংলাদেশীরা সামনের দিনগুলোয় দেশটির ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে কিছুটা আশঙ্কায় রয়েছেন। তাদের এ আশঙ্কার উৎস বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বিবৃতি। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু সাধারণ বাংলাদেশীদের ওপর এর তেমন একটা প্রভাব থাকবে না। সাধারণ নাগরিকের ভিসা প্রাপ্তিতে এর কোনো ছাপ না পড়লেও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এ ঘোষণার বহুমুখী প্রভাবের আশঙ্কা করছেন তারা। যদিও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর নেতারা।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কার্যালয় থেকে বুধবার প্রকাশিত বিবৃতিতে গণতন্ত্র ও আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের পথে বাধাদানকারী কাউকে ভিসা দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন উৎসাহিত করতে নতুন এ ভিসা নীতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে, আমি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১২(এ)(থ্রি)(সি)(‘‌‘‌‌থ্রিসি’’)-এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে পরিগণিত যেকোনো বাংলাদেশী ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।’

বিবৃতিতে ‘‌গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে’ এমন যেসব বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় দেশের বিভিন্ন মহলে বিভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নতুন এ ভিসানীতিকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। এ ভিসানীতি ঘোষণার পরদিন বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা নতুন ভিসা নীতি করেছে। আমরা আশা করছি, আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, জ্বালাও-পোড়াও চাই না, তাতে এটি আমাদের সাহায্য করতে পারে। এ কারণে যারা জ্বালাও-পোড়াও করে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, তারা হয়তো বিরত থাকবে। সেটা আমাদের জন্য সহায়তামূলক হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত না, সহায়তামূলক হতে পারে।’

একই দিনে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নতুন মার্কিন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এটাকে স্বাগত করছি এ কারণে যে বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে আশঙ্কা, অন্তত এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।’

ক্ষমতাসীন ও বিরোধী—উভয় পক্ষ থেকেই স্বাগত জানানো হলেও বিষয়টি নিয়ে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন কূটনীতি ও রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। নতুন এ ভিসা নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তাটি দিতে চেয়েছে, সেটি অনুধাবন করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। অন্যথায় বিষয়টি সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানে আমাদের বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। কেননা তারা যখন কোনো নীতি গ্রহণ করে তখন তাদের সব স্তরে আলোচনা করেই নেয়া হয়। ফলে এটা পুনর্বিবেচনার সুযোগ কম থাকে। কাজেই আমি মনে করি, তারা বার্তাটি কীভাবে দিল তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তাদের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বার্তাটি আমাদের বোঝা প্রয়োজন। কী বার্তা তারা দিয়েছে এবং কীভাবে দিয়েছে এ বিষয়টি যদি আমরা না বুঝি এবং আমাদের অবস্থানটা ধরে রাখতে চেষ্টা করি তাহলে আমরা একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি। তাদের এ ঘোষণার বাস্তবায়ন হলে তা হয়তো জনসম্মুখে আসবে না। শুধু যারা সংশ্লিষ্ট, তারাই জানবে। কিন্তু বিষয়গুলো যদি পাবলিকলি কিছু হয়ে যায় তাহলে বিষয়টি আমাদের জন্য অস্বস্তির হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রার্থী বাংলাদেশী সাধারণ নাগরিকদের ভিসা ইস্যু কার্যক্রমে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’

এশিয়া মহাদেশে অন্য অনেক দেশের নাগরিকদের তুলনায় বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন ভিসা ইস্যুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশীদের জন্য মোট ২ লাখ ২৫ হাজার ৭১৫টি ভিসা ইস্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে হয়েছে ২৯ হাজার ২০২টি। সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০১৪ সালে। ওই বছর বাংলাদেশীদের জন্য মোট ৩৫ হাজার ২৫টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। এর পাঁচ বছরের মাথায় ২০১৯ সালে ইস্যুকৃত ভিসার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৫০৫টি। আর সবচেয়ে কম হয়েছে কভিড প্রাদুর্ভাব শুরুর বছর ২০২০ সালে। ওই বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন কনস্যুলার দপ্তরগুলো ভিসা ইস্যু করেছিল ১২ হাজার ৩৯টি।

এর আগে নাইজেরিয়াকে নিয়েও একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। আফ্রিকার দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বোলা তিনুবু। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদু বুহারির কাছ থেকে এখনো ক্ষমতা গ্রহণ করেননি তিনি। যদিও এর মধ্যেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দেয়ার অভিযোগে বেশকিছু নাইজেরিয়ানের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ও নাম অপ্রকাশিত কয়েক নাইজেরিয়ানের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন বলেন, ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের সেকশন ২১২ (এ)(৩)(সি)-এর অধীনে গণতন্ত্রকে খর্ব করার জন্য দায়ী বা অনৈতিকভাবে জড়িত এসব ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত হবেন। তারা হুমকি ও সহিংসতার মাধ্যমে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোটের ফলাফল প্রভাবিত করা ও নাইজেরিয়ার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্বকারী অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপমূলক কার্যক্রম শুধু ভিসা নীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি দিয়ে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই । তবে এটি ঠিক, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানাতে চেয়েছে বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের নজর আছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আগ্রহ আছে। তারা বোঝাতে চেয়েছেন যদি অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তাদের পদক্ষেপগুলো এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আমার আশঙ্কা আছে ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় রকমের চাপ তৈরি হতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, সেটা নির্বাচনের পরে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা নির্বাচনের আগে শুরু হয়েছে। অন্যকিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগেও বলেছে। বাংলাদেশের বিষয়টা গুরুত্ব পাচ্ছে এ কারণে যে আমরা দেখেছি, গত প্রায় দেড় বছর দেশটি বলে আসছে এ ধরনের পরিস্থিতিতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সেটির জন্য তারা উৎসাহিত করেছে। তবে কারো ভিসা বাতিল করলে আমরা জানতে পারব না। কারণ কারো ব্যক্তিগত তথ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করে না যদি না তাদের ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আমার আশঙ্কা আগামী সাত মাসে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যদের কাছ থেকেও বিভিন্ন রকম চাপ আসতে পারে।’

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button