স্বাস্থ্য

দেশে প্রতি চারজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে প্রতি চারজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০২২ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এক সমীক্ষায় দেখতে পায়, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী প্রতি চারজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রম এর জন্য দায়ী। আজ বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এ বছর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।’

উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কোনও লক্ষ্মণ থাকে না, তবে অনেক প্রাণঘাতী রোগের কারণ এটি। যেমন—হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোক, চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানো, কিডনি ফেইলিউর, রক্তনালির রোগ ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ এর কোনও কারণ পাওয়া না গেলেও শতকরা ৫-১০ জনের ক্ষেত্রে কারণ নির্ণয় করা যায় এবং এই রোগ পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। যাকে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন বলা হয়। সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের এক-তৃতীয়াংশ রোগী হাইপার এল্ডোস্টেরনিজমে আক্রান্ত। যার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের দেশে এখনও শুরু হয়নি।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ৪৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ৩০-৭৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ১ দশমিক ৪ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, যার দুই-তৃতীয়াংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জনগণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর এই সমস্যায় স্ট্রোক ও হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে ভুগে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।

রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০ মি.মি. পারদচাপ ধরা হয়। রক্তচাপের এই মাত্রা দুইটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হলে তবে উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে ধরা হয়।

তবে বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ১৩০/৮০ মি.মি. পারদচাপের বেশি হলে তা উচ্চ রক্তচাপের পর্যায়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ হৃদরোগে মারা যান। আর হাইপারটেনশন হচ্ছে হৃদরোগের প্রধান কারণ। দেশে আড়াই থেকে ৩ কোটি লোক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। কিন্তু এদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। কারণ বেশিরভাগই থাকেন স্ক্রিনিংয়ের বাইরে। অধিকাংশ মানুষই রক্তচাপ মাপেন না, তাই তারা জানেন না। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ ছিল অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যু ছিল ৩০ শতাংশ। আর এখন সেটি ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কয়েকবছরের মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যু বেড়েছে কয়েকগুণ।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ফেলো এবং হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডা. শামীম জুবায়ের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ এবং ২০২২ সালের তথ্য দেখে বুঝা যায় যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু ৩ শতাংশ এবং হৃদরোগে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশ বেড়েছে। অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে জীবনযাপনের ধরন। যেমন, মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে বসে থাকে যার কারণে ঘুমের সময়ে একটা বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। যেখানে ন্যূনতম ছয় ঘণ্টা ঘুমানো উচিত সেখানে মানুষ অনেক ঘুমাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কম ঘুমের কারণে একটা চাপ এসে পড়ছে। এছাড়া শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিচ্ছে মানুষ। হাঁটাহাঁটি কম হচ্ছে, জাংক ফুড বেশি খাওয়া হচ্ছে। সাদা গম, চাল, চিনি, লবণ এবং মদ এই পাঁচটি খাবার অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। অথচ প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া দরকার, কার্বোহাইড্রেড খাওয়া দরকার কম, প্রোটিন খাওয়া দরকার বেশি। এই ফরমুলার বাইরে মূলত আমরা কার্বোহাইড্রেড বেশি খাচ্ছি। আরেকটি বিষয় দেখা যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে, রাস্তাঘাটের উন্নয়নের ফলে হাঁটাহাঁটি কমে গেছে, যন্ত্রচালিত বাহনের ব্যবহার বেড়েছে। তাই গ্রামাঞ্চলেও ডায়বেটিস এবং হাইপারটেনশনের প্রবণতা বাড়ছে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button