আলোচিতসারাদেশ

অনলাইনে নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার ফাঁদ, দামি রেস্টুরেন্টে খাবারের ভুয়া ফরমাশ দেওয়াসহ নানাভাবে অনলাইনে প্রতারণা বেড়েছে। পুলিশ বলছে, সাইবার অপরাধের নতুন নতুন ধরন সামনে আসছে। বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনাই বেশি ঘটছে।

গত আড়াই বছর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে আসা ৪০৬টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অনলাইন প্রতারণার মামলা হয়েছে ৯৮টি, যা মোট মামলার প্রায় ২৪.১৩%। এরপরেই রয়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে (হ্যাক করে) অনলাইনে হয়রানির ঘটনায় ৯৭টি (২৩.৮৯%)। অনলাইনে মানহানিকর বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগে ৭৮টি (১৯.২১%) এবং ব্যাংক-মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবায় প্রতারণায় ৭২টি মামলা (১৭.৭৩%) হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সাইবার অপরাধের অভিযোগে ৬১টি (প্রায় ১৫.০২%) মামলা হয়েছে।

সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা
ফেসবুকসহ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন প্রতারকেরা। ওই ঋণ পেতে হলে নির্দিষ্ট অ্যাপ নামাতে বলছেন তারা। একবার এই অ্যাপ নামালেই ফাঁদে পড়তে হচ্ছে। অ্যাপ দিয়ে ওই ব্যক্তির সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য (পাসওয়ার্ড, ছবি–ভিডিও ইত্যাদি) হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। এরপর ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

অনলাইন খাবারের নামে প্রতারণা
অনলাইনে প্রতারণার আরেকটি নতুন ঘটনা সামনে এসেছে গত রমজান মাসে। রাজধানীর একটি খ্যাতনামা রেস্টুরেন্টের নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে “সাহ্‌রি ও ইফতারের খাবারে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়!” বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। সেটা দেখে অনেকেই সাহ্‌রি ও ইফতারের ফরমাশ দিয়ে মোবাইল ফোনে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেছিলেন। পরে বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার।

মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কর্মাস ও রাজনৈতিকদের ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা
ডিবি সূত্রের বরাতে দৈনিক প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মধুখালী এলাকাভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রতারণার চক্র গড়ে উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নাটোরের লালপুরকেন্দ্রিক একাধিক চক্রের খোঁজও পাওয়া গেছে।

ই-কর্মাসের নামে ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির আড়ালে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণায় জড়িত নড়াইলভিত্তিক আরেকটি চক্র।

রংপুর ও নীলফামারী এলাকায় একাধিক প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। তারা রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিচিত ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।

হয়রানির শিকার সিংহভাগই নারী
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, সাইবারজগতে নারী ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে ফেসবুক আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনাই বেশি ঘটে। হ্যাকাররা বিভিন্ন লিংক পাঠিয়ে কৌশলে সেখানে ক্লিক করিয়ে পাসওয়ার্ড জেনে নেয়। এভাবে তারা আইডি হ্যাক করে ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে “ব্ল্যাকমেল” করে টাকা আদায় করতে এগুলো ব্যবহার করে। এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তারা নারীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে।

প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেছেন, “তারা অঞ্চলভিত্তিক বেশ কিছু সাইবার অপরাধী চক্র শনাক্ত করেছেন। কিছু সদস্যকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের কাছে দেওয়া হয় না এমন আরও অনেক ধরনের সাইবার অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। এছাড়া সাইবার অপরাধের কারণে সংঘাতও বেড়েছে বলে মনে করেন তারা।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তৌহিদ ভূঁইয়া সাইবার অপরাধের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা দিতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন।

এছাড়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে সাইবার সুরক্ষাবিষয়ক সচেতনতামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করেন আইটি এক্সপার্ট তানভীর হাসান জোহা। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সতর্ক হতে হবে। লোভ সামলাতে হবে। অনলাইনে কারো সঙ্গে পরিচয় হলে সাবধান থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট অনেক আধুনিক হয়েছে। কিন্তু প্রতারকরা আরও এগিয়ে। প্রতারিত হওয়ার আগে কোনো প্রস্তাব পেলে সে বিষয়েও পুলিশের সাহায্য নেওয়া যায়। এটি করতে হবে।”

পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, “সচেতন হলে আমরা অনলাইনে সম্মানহানি, মানহানি ও অর্থ খোয়ানো থেকে বাঁচতে পারি।”

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button