গাজীপুর

কালীগঞ্জের আলোচিত মহিউদ্দিন হত্যা: ১৪ বছর পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জের আলোচিত মহিউদ্দিন (১৫) হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শফিকুলকে ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে পাবানার ঈশ্বরদী থানা পুলিশ।

সোমবার (১ মে) তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার শফিকুল (৩৪) কালীগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার আঃ ছালাম ওরফে ছেলামের ছেলে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শফিকুল পালাতক থাকা অবস্থায় সর্বশেষ পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পাবনা জেলা পুলিশের সহায়তায় ঈশ্বরদী থানার রূপপুর এলাকা থেকে শফিকুলকে গ্রেপ্তার করে কালীগঞ্জ থানায় আনা হয়। পরে সোমবার সকালে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর কালীগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে মহিউদ্দিনের মোবাইলে ফোন আসে। এরপর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পর দিন স্থানীয় ময়েজ উদ্দিনের বাড়ির পাশে একটি বিলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হওয়া তার মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পরে নিহতের বাবা ফজলুর রহমান বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ১০জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই (বুধবার) দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক মো. ফজলে এলাহী ভূইয়া হত্যার দায়ে ৫ জনকে ফাঁসির আদেশ এবং একই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার আব্দুল কাদিরের ছেলে শামীম, বাচ্চু মোল্লার ছেলে নূরুল ইসলাম, মজনু সরকার ওরফে মজলু সরকারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, আব্দুস ছালামের ছেলে শফিকুল ও ছমির উদ্দিনের ছেলে বাবু।

রায় ঘোষণার সময় সাদ্দাম হোসেন ও বাবু আদালতে উপস্থিত থাকলেও অপর তিন আসামি পলাতক ছিলেন। এর মধ্যে শফিকুলকে ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর পাবানার ঈশ্বরদী গ্রেপ্তার করা হলো। এখনো দু’জন পলাতক রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছিলেন তৎকালীন এপিপি মকবুল হোসেন কাজল, আতাউর রহমান খান, আব্দুল করিম (ঠান্ডু)। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. হানিফ শেখ ও বেগম জেবুন্নেছা মিনা।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে নিহত মহিউদ্দিনকে দুবাই পাঠানোর জন্য কাউলতিয়া গ্রামের শরীফকে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এর দুই বছর আগে মহিউদ্দিনের ভাই সৌদি প্রবাসী ইমান আলী একটি ক্যামেরা মোবাইল পাঠিয়েছিল। ওই মোবাইল ফোনটি বেশিরভাগ সময় মহিউদ্দিন ব্যবহার করতো। ঘটনার দিন বিকেলে তার মোবাইলে একটি কল আসলে সে বাড়ি থেকে বের‌ হয়। পরে আর বাড়ি ফেরেনি। এরপর দিন সকালে স্থানীয় ময়েজউদ্দিনের বাড়ির পূর্ব পাশের একটি বিলে মহিউদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছিল, প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলার আসামিরা বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়ে আসছিল। এতে সে সময় তাদের ধারণা করা হয়েছিল, জমি সংক্রান্ত বিরোধে মহিউদ্দিনকে হত্যার পর মোবাইল নিয়ে যায় বিরোধ থাকা প্রতিবেশীদের ভাড়াটে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম (১) বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শফিকুলকে গ্রেপ্তার করতে ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। সম্প্রতি প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে রোববার রাতে পাবনার ঈশ্বরদীর থানার রূপপুর এলাকা থেকে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে শফিকুলকে কালীগঞ্জে এনে সোমবার সকালে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button