গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশে ফুটপাতে ঘুমানো শিশুরা বঞ্চনা, চরম দারিদ্র্য, অপুষ্টি, রোগ, অশিক্ষা ও সহিংসতার শিকার বলে জানি জানিয়েছে ইউনিসেফ।
সোমবার (১০ এপ্রিল) ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) “পথশিশু জরিপ ২০২২” প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগের ৭,২০০ শিশুর সঙ্গে কথা বলে এই জরিপ প্রতিবেদন দৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে পথশিশুর নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেছেন, “প্রতিবেদনের ফলাফলগুলো বিস্ময়কর। পথশিশুদের জন্য জরুরিভিত্তিতে আমাদের কাজ করা দরকার। পথশিশুদের জন্য সহানুভূতি ও সমর্থন জরুরি।”
জরিপ অনুসারে, দেশে পথশিশুদের বেশিরভাগই ছেলে (৮২%), এবং বেশিরভাগই দারিদ্র্যের কারণে বা কাজের সন্ধানে বের হয়ে রাস্তায় বা ফুটপাথে বসবাস করছে। এই শিশুদের মধ্যে ১৩% পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, ৬% এর বাবা-মা নেই বা তাদের বাবা মা আছেন কিনা তারা তা জানে না। দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৮.৫% পথশিশুর অবস্থান ঢাকা বিভাগে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২২.৭% এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮.৩% পথশিশু রয়েছে।
প্রায় ২৫% পথশিশু ধূমপান করে এবং ১২% মাদকের নেশায় আসক্ত। ৬৪% পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী পথশিশু রয়েছে ৫৪%। পথশিশুদের গড় বয়স ১২.৩%।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, পথশিশুদের সর্ব্বোচ্চ ২০.৪% চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সর্বনিম্ন ৪.৯% সিলেট বিভাগের জেলাগুলো থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে পথশিশুর নিজ জেলা ময়মনসিংহ সর্বোচ্চ ৬.৯% এবং বরিশাল ৫.৯%, ভোলা ৫.৪%, কুমিল্লা ৪.৫%, কিশোরগঞ্জ ৪.১% এবং কক্সবাজার ৩.৮%।
প্রধানত ৩৭.৮% পথশিশু দারিদ্রতা, ১৫.৪% বাবা-মা শহরে আসার কারণে এবং ১২.১% কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে শহরে এসেছে। প্রতি পথশিশুর ৫ জনের ২ জনই একা একা শহরে এসেছে। ১০ জন পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। সব পথশিশুর মধ্যে কেবল ১৮.৭% পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব নগণ্য সংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখা করেছে।
বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বিবিএস সব সময় জাতির প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম বিবিএসের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। নিয়মিত বিভিন্ন শুমারির পাশাপাশি এ ধরনের চাহিদাভিত্তিক জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবিএস সবসময় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী।”
সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন