আন্তর্জাতিকআলোচিতজাতীয়

সবার দৃষ্টি ওয়াশিংটনের বৈঠকে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বারবার তাগাদা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ মানবাধিকার ইস্যু নিয়েও বারবার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে দেশটি। এ ছাড়া, আছে কোয়াড-আইপিএসে যোগ দেওয়া না দেওয়াসহ নানা প্রসঙ্গ।

এমন পটভূমিকায় সোমবার (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়) ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ বৈঠকে যোগ দিতে ড. মোমেন শুক্রবার (৭ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। আর কয়েক মাস পরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ রয়েছে। অংশগ্রহণমূলক মানে হলো বিএনপিকে নির্বাচনের আনার বিষয়টি। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হতে পারে।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গতবছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। সেই বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে তাগাদা দেন ব্লিঙ্কেন।

এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন সাংবাদিকদের সেসময় জানান, তিনি ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন বিএনপিকে নির্বাচনের আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে। যদিও পরে অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন তিনি এমন কথা বলেননি।

ওই বৈঠকের পর একবছর দফায় দফায় বিভিন্ন পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসেছেন। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-গুমসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন। প্রতিবারই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ পদক্ষেপ নেবে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ চীন-রাশিয়া বলয়ে চলে যেতে পারে বলেও উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই উদ্বেগের কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে কোয়াড ও আইপিএসে যোগ দিতে বললেও বাংলাদেশ শুধু সময় নিয়েছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়।

২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। তিনি বাংলাদেশকে কোয়াড-আইপিএসে যোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, এই অঞ্চলে হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায়।

অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন চায় বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে থাকুক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড-আইপিএসে যোগ না দিক। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রকাশ্য বিতণ্ডায় জড়িয়েছিল চীন। ২০২১ সালের শেষদিকে তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রকাশ্য বলেছিলেন বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে তা প্রভাব ফেলবে।

এরপর একে একে ঢাকা সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা সবাই আগামীর জাতীয় নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘উন্নতির’ তাগিদ দেন।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এতদিন ইউরোপে আমরা যে ‘কোল্ড ওয়ার’ বা ঠাণ্ডা যুদ্ধ দেখেছি সেই কোল্ড ওয়ার ভিন্ন ফর্মে এশিয়ার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ভূরাজনীতিটা কিন্তু এখন আমাদের গায়ের উপর এসে পড়েছে। যেটা আগে দূরে ছিল।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন বাংলাদেশের জন্য যেটা চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে সেটা হলো এই ভূরাজনৈতিক ঘুর্ণাবর্তের মধ্যে বাংলাদেশ নিজেকে কীভাবে রক্ষা করবে। বাধ্য হয়েই ভূরাজনৈতিক কূটনীতির মধ্যে ঢুকে পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই বা না চাই।

র‌্যবের উপর নিষেধাজ্ঞা

এই যে এতজন মার্কিন কর্মকর্তা গত এক বছরে ঢাকা সফর করলেন তাদের প্রত্যেকের কাছেই র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। প্রতিটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ড. মোমেন বিষয়টি নিজেই জানিয়েছেন।

প্রায় দুই বছর হতে চলল র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও রাজস্ব দপ্তর। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এই দুই বছরে বাংলাদেশর পক্ষ থেকে বহু দেনদরবার করা হয়েছে যাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কথায় কর্ণপাত করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটনেও সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সোমবার (১০ এপ্রিল) স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হবে।

অন্যান্য ইস্যু

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সরব ভূমিকায় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও শরণার্থীদের অর্থ সহায়তার বিষয়টি বৈঠকে তুলবেন ড. মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন-মানবাধিকার ছাড়াও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ইউক্রেন ইস্যু আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে।

 

সূত্র: ঢাকা প্রকাশ

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button